শুরু হতে যাচ্ছে আফগান সরকার ও তালেবানের বহুল প্রতিক্ষিত ‘শান্তি আলোচনা’

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০
মুক্তির আনন্দে তালেবানরা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আন্ত:আফগান শান্তি আলোচনা আর একবার অনিশ্চয়তার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত শান্তি আলোচনা দু একদিনে শুরু হবে বলেই খবর দিয়েছে আফগান গণমাধ্যম টোলোনিউজ ডটকম।

…নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের বরাতে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে যে আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক মিত্ররা তালেবানের যে ছয়জন “কঠোর” বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তাদের কাবুল থেকে দোহায় স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্য দুটি সূত্রের বরাতে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে যে তালেবানদের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া আফগান সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি আগামীকালই দোহায় রওনা দেবে। সূত্রের খবর অনুসারে, পরের দিনই আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে তালেবানের কোন প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি।

আরও পড়ুন : কাতারের সাথে তালেবানের বৈঠক : সব বন্দির মুক্তি তারপরই শান্তি আলোচনা

এদিকে শান্তি আলোচনা বিষয়ে একদিকে তালেবানকে দোষারোপ করছে আফগান সরকার অপরদিকে তাদেরকে শান্তি আলোচনায় বসতে আকুতিও জানাচ্ছে তারা।

আফগান সরকার দাবি করে বলেছে – তালেবান শান্তি আলোচনার বিষয়ে সৎ হলে এখন তাদের অবশ্যই আলোচনায় বসা উচিত। তারা এখন সময়ক্ষেপন করে মূলত তাদের দাবির প্রতি সৎ নয় এমনটাই প্রমান করছে। আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট সরওয়ার দানিশ আজ এ কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন :

তালেবানের বিজয় : মুক্তি পেলো সকল বন্দিরা, নজর এবার ‘শান্তি আলোচনায়’

শান্তি আলোচনায় তালেবানের নেতৃত্ব দেবেন মাওলানা আবদুল হাকিম

পাকিস্তান পার্লামেন্টে বিন লাদেনকে ‘শহীদ’ আখ্যা দিলেন ইমরান খান

এছাড়াও তালেবানের পক্ষ থেকে করা ১০০ বন্দিকে মুক্তি না দেওয়ার দাবিটিও তারা অস্বিকার করেছেন। সাথে সাথে আফগান সরকার এবং আফগানিস্তানের তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনার পথ থেকে সমস্ত বাধা ও বিপত্তি অপসারণ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন – “সমস্ত বাধা অপসারণ করা হয়েছে এবং এখন তালেবানরা তাদের দায়িত্ব বোঝার এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি আলোচনার আলোচনায় অংশ নিতে হবে – যদি তালেবানরা তাদের দাবির প্রতি সৎ হয়”। বলেছেন সারওয়ার দানিশ।

এদিকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির মুখপাত্র সিদ্দিক সিদ্দিকী বলেছেন, “তালেবানরা কিছুটা অস্থির হয়ে পড়েছে এবং তাদের শান্তি আলোচনার দলকে শেষ মুহুর্তে পরিবর্তন করা ইঙ্গিত দেয় যে তারা এখনও আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।”

অপরদিকে আফগানিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা আলোচনাকারী দলের সদস্যরা বলেছেন যে আলোচনা শুরু করতে বিলম্ব করার ক্ষেত্রে তালেবানদের আর কোনও অজুহাত নেই।

তবে দলটির একাধিক সদস্যরা বলেছিলেন যে, গত উনিশ বছর ধরে আফগানিস্তানের যা ক্ষতি হয়েছে তার সুরক্ষা এবং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুরক্ষাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তালেবানদের সাথে আলোচনার আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে।

আরও পড়ুন : 

বিবাদে আফগান সরকার : রাজনৈতিকভাবেও বিজয়ের পথে তালেবান

আফগানিস্তানে যুদ্ধ কোন সমাধান নয় : সাবেক তালেবান কমান্ডার

হাফেজ হলো মার্কিন বিমান হামলায় চোখ হারানো সেই আফগান বালক

আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনার দলের সদস্য গোলাম ফারুক মাজরোহ বলেছেন, “আমরা সুন্দর একটি ব্যবস্থার জন্য বছরের পর বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং আমরা আমাদের স্বাধীনতার সাথে কোন আপস করবো না, যার জন্য আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি, এ মুহুর্তে এসে তালেবানের এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে শান্তি আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

আফগান সরকার এবং তালেবানের মধ্যে বন্দি বিনিময় সমাপ্ত করার ঘোষণা দেওয়ার পর আফগান সরকার  এবং তালেবানদের মধ্যে আলোচনার আশা গত দু’সপ্তাহে নতুন গতি জাগিয়েছে। তবে তালেবান বলেছে যে আফগান সরকার তাদের তালিকায় থাকা ১০০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়নি যাদের নাম তালিকায় ছিল।

এছাড়াও তালেবান বলেছে যে তাদের ছয়জন উচ্চপর্যায়ের বন্দী, যাদের মুক্তি দিতে অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স নিষেধ করেছিল, তাদের দোহায় স্থানান্তর করা হয়েছে ঠিকই তবে তালেবান তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন – তাদেরকে কাতারে স্থনান্তরিত করা হলেও তাদের মুক্তির ব্যাপারে আইনী জটিলতা রেখে দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে সরকারের এটি করা উচিত হয়নি। তালেবান জানিয়েছে যে এই বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য তাদের একটি প্রযুক্তিগত দল কাবুলে রয়েছে।

আরও পড়ুন :

তালেবানের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত ন্যাটো জোট

তালেবানের সঙ্গে একান্তে বসতে চান ট্রাম্প

অপরদিকে কাবুলের রাজনৈতিক কর্মী ওয়ালিউল্লাহ শাহীন বলেছেন, কোনো বাহানা না করেই সরকারের উচিত ছিলো এই বন্দীদের মুক্তি দেওয়া।

এদিকে, নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে টোলোনিউজ জানিয়েছে যে আন্তর্জাতিক মিত্ররা যেসব ছয় “কঠোর” তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল তাদের কাবুল থেকে দোহায় স্থানান্তর করা হয়েছে। অন্য দুটি সূত্রের বরাতে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে যে তালেবানদের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া আফগান সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি আগামীকালই দোহায় রওনা দেবে। সূত্রের খবর অনুসারে, পরের দিনই আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

[আফগান গণমাধ্যম থেকে পাবলিক ভয়েসের অনুবাদ]

প্রসঙ্গত : গত ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত মার্কিন-তালিবান চুক্তির অধিনে, প্রায় ৫,০০০ তালেবান কর্মীকে আফগান সরকার কর্তৃক মুক্তির আলোচনা হয়েছিলো।

শান্তি আলোচনা সম্পর্কিত অন্যান্য খবর :

শান্তি আলোচনা : ঝামেলা মিটিয়ে প্রস্তুত আফগান সরকার, তৈরি তালেবানও

আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে তালেবানদের পাকিস্তান সফর

শান্তি আলোচনার আগ মূহুর্তে ১১ জন তালেবানকে হত্যা করেছে আফগান বাহিনী

যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও হামলা বন্ধের শর্তে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা

শর্তসাপেক্ষে আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবে তালেবান

শিগগিরই শুরু হচ্ছে আফগান তালেবান শান্তি প্রক্রিয়া!

তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চান আশরাফ গনি

তালেবান সম্পর্কিত সংবাদ :

মোল্লা মোহাম্মদ ওমর : তালেবান যাকে মার্কিন সেনাদের নাকের ডগায় রেখেছিল

তালেবান নেতৃত্বে মোল্লা ওমরের ছেলে, শান্তি চুক্তির অপেক্ষায় আফগান সরকার

ন্যাটো বাহিনীর কমান্ডারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করল তালেবান

ফের আফগান তালেবান বন্দীদের মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু

আবারো মুক্তি পেলেন ৪০০ তালেবান

ঈদ উপলক্ষে তালেবানের তিনদিনের যুদ্ধবিরতি ও ১০০০ বন্দি মুক্তি

আফগান সরকারের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেনি তালেবান

আফগান সামরিক ঘাঁটিতে তালেবানের হামলা, ৩ সেনা নিহত

তালেবান যোদ্ধাদের হামলায় আফগান পুলিশের ৬ সদস্যের মৃত্যু

১,০০০ তালেবানকে মুক্তি দিয়েছি, আমাদের লোকজনকেও মুক্তি দিন:

আরও প্রায় ৫০০ তালেবান নেতাকে মুক্তি দিলো আফগান সরকার

তালেবান আমেরিকা চুক্তির সংবাদ :

আরও সংবাদ :

সূত্র :  আফগান গনমাধ্যম, আনাদুলু, পাবলিক ভয়েস আর্কাইভ

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন