বিবাদে আফগান সরকার : রাজনৈতিকভাবেও বিজয়ের পথে তালেবান

প্রকাশিত: ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০

আমেরিকা নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে আফগান সরকারের সাথে বোঝাপড়ায় নেমেছিলো তালেবানরা। আফগান সরকারের কাছে বন্দি তালেবানের ৫ হাজার সদস্যকে মুক্তির নিঃশ্বর্ত দাবি তুলেছিলো তারা।

আফগান সরকার কর্তৃক ৪৯৯৩ জন বন্দিদের মুক্তি দেওয়াসহ তালেবানের সকল দাবি পূরণ করার পর কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সাথে আশরাফ ঘানী নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের সাথে শান্তি আলোচনার দিনক্ষণও ঘনিয়ে আসছিলো।

এমন সময়ে খবর এলো আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি এবং আফগান জাতীয় পরিষদের উচ্চ মন্ত্রনালয়ের প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সাথে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে। এ বিরোধে সবচেয়ে উপকৃত হবে তালেবান। এমনটাই মতামত আফগানিস্তানের রাজনীতি বিশ্লেষকদের।

গত দুদিন আগে (বৃহস্পতিবার) আশরাফ ঘানি বলেছিলেন – তালেবানের সাথে রাজনৈতিক বা সামরিক শক্তি ভাগাভাগির আলোচনা হবে না। বরং শান্তি প্রতিষ্ঠায় করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হবে। কিন্তু ঘানি এবং আবদুল্লাহর সাথের বিরোধে রাজনৈতিকভাবেও ফায়দা পাবে তালেবানরা।

শান্তি আলোচনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী ইকবাল খাইবার বলেছেন – “যদি আফগানিস্তান সরকার এই অনৈক্যমূলক বিবাদের পথ অব্যাহত রাখে তবে সম্ভবত তালেবানরা বিজয়ী হবে কারণ তাদের একীভূত অবস্থান এবং শক্ত দলগত অবস্থান রয়েছে।

আন্ত: আফগানিস্তানের আলোচনার দ্বারপ্রান্তে এসে রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি ও জাতীয় পরিষদের উচ্চ মন্ত্রকের প্রধান পরিষদ প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে

শান্তি পরিষদের কাঠামো বাছাই করার জন্য তাদের প্রচেষ্টাসহ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য আফগান রাজনীতিবিদরা বলেছিলেন যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দল এবং তালেবানদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলেও কাবুলে সরকারের অভ্যন্তরে শান্তির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেই। রাজনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে ঘানি ও আবদুল্লাহর মধ্যে ক্রমাগত বিভেদ দেশে শান্তির জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

“এই পরিস্থিতির ধারাবাহিকতা কেবল আমাদের জনগণকে আরও বিপর্যয়ের দিকে পরিচালিত করবে।” বলেছেন আফগানিস্তানের জাতীয় সংহতি আন্দোলনের প্রধান সাদিক ইসহাক গিলানী।

অপরদিকে ২৯ শে আগস্ট আশরাফ ঘানি একটি ঘোষণায় জাতীয় পুনর্মিলন সম্পর্কিত হাই কাউন্সিলের ৪৬ জন সদস্যকে অনুমোদিত করেছেন, যার নেতৃত্বে রয়েছে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। আসন্ন আন্তঃ-আফগান আলোচনার প্রস্তুতির দিকেও এটি একটি বড় পদক্ষেপ ছিলো।

এর দু’দিন পরে, জাতীয় পুনর্মিলন সম্পর্কিত হাই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ একটি পাল্টা বিবৃতি জারি করেন এবং ঘানির এই আদেশের বিরোধিতা করেন এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্সিলের সদস্যদের তালিকাভুক্ত করে বলেছে যে রাজনৈতিক চুক্তি অনুসারে এটিই প্রধান কাউন্সিল।

নতুন আদেশে ঘোষিত পরিষদের সদস্যরা হলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই, প্রাক্তন মুজাহিদী নেতা আবদুল রব রাসুল সায়াফ, হিযব-ই-ইসলামীর নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, সাবেক সহ-রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ করিম খলিলী, সাবেক উপ-প্রধাননির্বাহী মোহাম্মদ মহাকিক, প্রাক্তন সহ-রাষ্ট্রপতি মার্শাল আবদুল রশিদ দোস্তুম, প্রাক্তন সহ-রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ ইউনুস কানুনি, প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন রাব্বানী, সাবেক মুজাহিদী নেতা এবং সাবেক জ্বালানি ও জলমন্ত্রী মোইসমিলিল খান, প্রাক্তন বালুচর গভর্নর ও জমিয়তে ইসলামীর প্রধান নির্বাহী আতা মোহাম্মদ নূর, মায-ই-মিলি দলের প্রধান সাআদ হামিদ গিলানী, জাবিহুল্লাহ মুজাদ্দেদী, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সাআদ মনসুর নাদরী। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এনায়েত উল্লাহ শাহরানী, প্রাক্তন উপ-প্রধান নির্বাহী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ খান, আফগানিস্তানের ওলামা কাউন্সিলের প্রধান, রাষ্ট্রপতির সাদিক মোদাবির প্রশাসনিক কার্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান, মোহাম্মদ ইসমাইল গাজানফার এবং মাওলাই খোদায়েদাদ সালেহ।

অপরদিকে ডিক্রি অনুসারে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষদের সদস্যরা হলেন- প্রথম সহ-রাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ, দ্বিতীয় সহ-রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সরোয়ার দানেশ, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমার, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা হামদুল্লাহ মহিব,মেশরানো জারগির স্পিকার ফজল হাদি মুসলিমায়ার, প্রাদেশিক উপদেষ্টা মীর রহমান রহমানি, রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা আলমাস জাহিদ, শান্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী (যা এখনও অবধি নিযুক্ত হয়নি) এবং রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা মাওলভী জোরা তাহিরি প্রমুখ।

[আফগান গণমাধ্যম থেকে পাবলিক ভয়েসের অনুবাদ]

মন্তব্য করুন