‘সরঞ্জাম’ সংকটে দুই সিটি, বন্ধ বেশিরভাগ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২০

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর রাজধানীবাসীর সুরক্ষায় এবং এ দুর্যোগ মোকাবেলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বর্তমানে ‘সরঞ্জাম’ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে দুই সিটির বেশিরভাগ উদ্যোগই। এমনকি সংক্রমণের শুরুর দিকে দুই সিটির নিজস্ব কর্মীদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হলেও, এখন সেটিও আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে একদিকে যেমন রাজধানীবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে, তেমনি অসন্তুষ্ট খোদ সংস্থা দুটির কর্মীরাও।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর রাজধানীবাসীর সুরক্ষায় পাবলিক প্লেস জীবাণুমক্তকরণ, লকডাউন বাস্তবায়ন, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন, সাধারণ ও করোনার বর্জ্য আলাদাভাবে অপসারণ, কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। পাশাপাশি দুই কর্পোরেশনে কর্মরত কর্মীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ‘সরঞ্জাম’ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই। এমনকি দুই সিটির ভাণ্ডার বিভাগে নিজস্ব কর্মীদের দেওয়ার মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও আর মজুত নেই।

ডিএসসিসির ভাণ্ডার বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক করোনা মহামারি মোকাবেলায় তারা এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৫০টি সার্জিক্যাল মাস্ক, ৭৯ হাজার ৯০০টি সাধারণ মাস্ক, ১১০টি কেএ-৯৫ মাস্ক, ৫০টি কেএন-৯৫ (৩এম) মাস্ক, ২ হাজার ৮৫০ জোড়া গামবুট, ১৫ হাজার মপ ক্যাপ, ১৭ হাজার ১০০ জোড়া রাবারের গ্লাভস, ৫৪০ জোড়া ওয়ার্ম গ্লাভস, ৪ হাজার ৪৪০ জোড়া চায়না হ্যান্ড গ্লাভস, ১ হাজার জোড়া মেডিকেল হ্যান্ড গ্লাভস (সার্জিকাল), ১ হাজার জোড়া কমফোর্ট হ্যান্ড গ্লাভস (সার্জিক্যাল), ৭৫০টি সেফটি গগলস, ১৫০টি মেডিকেল গগলস, ৪০৪টি সেফটি ড্রেস, ১৫ হাজার ৭৭৫টি জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৫৩ হাজার ৩৬৮টি সাবান, ২ হাজার ১৬ পিস কেয়া ব্র্যান্ডের সাবান, ৫১০টি ডিসইনফেক্টটেন্ট স্প্রে, ১ হাজার লিটার স্যাভলন, ৫০ হাজার কেজি ব্লিচিং পাউডার, ১ লাখ লিটার সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড, ১৫টি ত্রিপল, ৫ হাজার কেজি নারিকেলের শলা ও ৩ লাখ পিস সচেতনতা লিফলেট সংগ্রহ করেছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে সংস্থার ভাণ্ডার বিভাগে মজুত আছে কেবল ২ হাজার ৬২৫টি সাধারণ মাস্ক, ১০টি মেডিকেল গগলস, ২০০টি ওয়ার্ম গ্লাভস, ২০ জোড়া গামবুট এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতনতার জন্য যে ৩ লাখ পিস লিফলেট সংগ্রহ করা হয়েছিলো সেগুলো। বন্ধ হয়ে গেছে কর্মহীন মানুষের মধ্যে যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হতো সেটিও।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি আগের থেকে ভালো হয়েছে। সব কিছুই ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হয়েছে। যখন সংক্রমণ বেশি ছিলো তখন বিপুল সংখ্যক সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকায় এখন হয়তো এসব কার্যক্রম কিছুটা কমে এসেছে।

অপরদিকে, ডিএনসিসির ভাণ্ডার বিভাগে কী পরিমাণ সুরক্ষা সমাগ্রী মজুত রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিএনসিসিতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী মজুত নেই। এ ছাড়া ঢাকা উত্তরের বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো ‘সরঞ্জামের’ অভাবে সেগুলোও এখন বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মামুনুর রহমান বলেন, বর্তমানে তারা শুধু নগরবাসীকে করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে সচেতন করার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মাঠ পর্যায়ে তাদের যেসব স্বাস্থ্যকর্মী আছে, তারা নগরবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন করছে। এ ছাড়া অন্যান্য পদক্ষেপ বন্ধ রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগে গাড়িতে করে রাস্তাঘাটে জীবাণুনাশক ছিটানো হতো। কিন্তু এখন গণপরিবহন চলা শুরু হওয়ায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তাই এ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর জনগুরত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় যে বেসিনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো, সেটিও বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কর্মীদেরও এখন আর বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে না। শুধু ইউএনডিপি বস্তি এলাকার মানুষদের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার আর সাবান বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশ মোতাবেক কর্মহীনদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে, দুই সিটির কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ না করায় ঝুঁকি নিয়েই তারা মাঠে পর্যায়ে কাজ করছেন। অনেকে সুরক্ষিত থাকতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পিপিইসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী কিনে ব্যবহার করছেন। যাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে তারা সেটিও পারছেন না।

এমএম /পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন