আল-নূর মসজিদে শহীদ হওয়া আমার সন্তানকে আমি জান্নাতে দেখবো

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া সায়াদের বাবা ‘জন মিলনে’ আদালতের সামনে বলেন – “আল-নূর মসজিদে আমার সন্তান ‘সায়াদ’ শহীদ হওয়ার পর আমার  হৃদয়ে একটি বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে যা কেবল তখনই সেরে উঠবে যখন আমি সায়াদের সাথে আবার জান্নাতে (স্বর্গে) দেখা করবো।”

তিনি সন্ত্রাসী ব্রেন্টনকে “আমি আশা করি, ব্রেন্টন তোমাকেও সেখানে দেখতে পাব এবং যদি তুমি সুযোগ পাও তবে আমি তোমাকে সায়াদের কাছে অন্তত ‘দুঃখিত’ বলার জন্য অনুরোধ করবো। আমি নিশ্চিত যে সে তোমাকেও ক্ষমা করে দিয়েছে।”

সায়াদের বাবা আদালতে তার পূত্রের ছবি দেখিয়ে সবাইকে অনুরোধ করেছিলো “দয়া করে, কেবল তার নামটি মনে রাখুন আপনারা।”

১৪ বছর বয়সী সায়াদকে শহীদ করার ঘটনার পর থেকে তাঁর বাবার মানসিক অসুস্থতা তৈরি হয়েছিলো এবং মানসিক চিকিৎসাও নিতে হয়েছিলো।

এছাড়াও পায়ে গুলিবিদ্ধ মোস্তফা বুজতাস ট্যারেন্টকে একটি “পঁচা কাপড়ের সাথে তুলনা করেছেন যা নোংরা কাজের পরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেছেন –  “আপনি মানুষ তো নন, এমনকি প্রাণীও নন, যেহেতু প্রাণী পৃথিবীর পক্ষে উপকারী কিন্তু আপনি ক্ষতিকর”।

অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে শহীদ পরিবারদের একজন সারা কাসেম তার পরিবারের অনেককেই আদালতে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে এই গণহত্যায় শহীদ হওয়া তার পিতাকে একজন “বীর” এবং একজন “উজ্জল ও ঝলমলে মানুষ” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি ট্যারেন্টকে তার নামটি ভুলে যাবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। “কান্না থামিয়ে থামিয়ে তিনি বারবার বলছিলেন -” আমি আমার বাবার কণ্ঠস্বর শুনতে চাই, আমার বাবার আওয়াজ শুনতে চাই।”

বিচারিক আদালতে প্রথম বক্তব্য রাখা আল-নূর মসজিদের ইমাম জামাল ফৌদা ট্যারান্টকে সম্বোধন করে বলেছিলেন “তুমি একজন পথভ্রষ্ট ও বিকৃত চিন্তা লালন করা ব্যাক্তি”। তিনি আরও বলেছেন যে, তোমার মস্তিস্কে ঘৃণার বীজ রয়েছে। তোমার জন্য কেবল ঘৃণা প্রকাশই করা যায়”

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বিচার চলছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি উচ্চ আদালতে।

চারদিন স্থায়ী হওয়া এ বিচারিক সময়ে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন আল-নূর মসজিদে নৃশংস এ হামলায় শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর একাধিক সদস্যরা। বিচারিক আদালতে তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারকের সামনেই ভর্ৎসনা দিয়েছে খৃস্টান জঙ্গী ব্রেন্টনকে। প্রতিটি শহীদ পরিবারের ভাষ্য বিচারককেও অশ্রুসজল করে তুলেছে।

গত সোমবার (২৩ আগস্ট) থেকে চলমান এ বিচারিক আদালতের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী কাল বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট)। ধারণা করা হচ্ছে – কাল বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চের এই আদালতে তাকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসী এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যক্তি হয়ে প্যারোলের সম্ভাবনা ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।

১৯৬১ সালে নিউজিল্যান্ডে শাস্তিস্বরুপ ‘মৃত্যুদণ্ড’ বাতিল করে দেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি হতে পারে এটি। কারণ নিউজিল্যান্ডে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজার ইতিহাস নেই এর আগে। ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে সেই শাস্তি দেয়া হতে পারে বলেই সবার ধারণা। তবে তিনি মৃত্যুদণ্ড পেলে ন্যায়বিচার আরও প্রশ্নাতিত হতো বলেই ধারণা অনেকের।

এছাড়াও তিনদিনের বিচারিক কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৬০ জনেরও বেশি লোক তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। যেখানে শহীদদের পরিবার এবং আহতরা কথা বলেছেন। ভুক্তভোগীদের কিছু আত্মীয় বিদেশ থেকে ভ্রমণ করে এসেছিলেন এবং এই বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে তাদেরকে দুই সপ্তাহের কোয়ারান্টিনেও থাকতে হয়েছিলো করোনাভাইরাস থেকে নিশ্চয়তার জন্য।

এদিকে আদালতে একে একে প্রায় সকল শহীদ পরিবারের ভাষ্য শোনা হয়েছে। সেখানে পরিবারগুলোর ভাষ্য ও আহতদের কথা শুনে অশ্রুসজল হয়েছেন সবাই। পরিবারগুলোর ভাষ্য ও আহতদের কথা শুনে অশ্রুসজল হয়েছেন সবাই।

ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিচারিক রায় বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন

 উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে হামলার এক বছর ও বিস্তারিত ঘটনা

মন্তব্য করুন