

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হওয়া সর্বকনিষ্ঠ শিশু তিন বছর বয়সী ‘মুকাদ ইবরাহীম’ এর বাবা আদালতে বলেছেন, ‘”আমি কখনই ভুলে যাবো না যে আমার ছেলে কীভাবে মসজিদে উপস্থিত হতো এবং বাচ্চাসূলভ দুষ্টুমি করতো। তার সাথে মসজিদে সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যেতো এবং সবাই তাকে পছন্দ করতো।”
- আল-নূর মসজিদে ভয়াবহ এ হামলায় শহীদ হওয়া সর্বকনিষ্ঠ শিশু তিন বছর বয়সী ‘মুকাদ ইবরাহীম’ এর বাবা বিচারকের সামনেই ট্যারেন্টকে একজন ‘শয়তান মানব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি ব্রেন্টনকে একজন ‘ভয়াবহ হত্যাকারী’ হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন।
তিনি বলেছেন – “জেনে রাখুন যে সত্যিকারের ন্যায়বিচার আপনার পরবর্তী জীবনের জন্য অপেক্ষা করছে এবং এটি আরও কঠোর (কারাগারের চেয়েও বেশি) হবে আপনার জন্য। আপনি যা করেছেন তার জন্য আমি আপনাকে কখনও ক্ষমা করব না।” তিনি আরও বলেছেন – “আপনি আমার ছেলেকে হত্যা করেছেন এবং আমার কাছে এটাই যেন আপনি পুরো নিউজিল্যান্ডকে হত্যা করেছেন,” স্থির কণ্ঠে কান্নাজড়িয়ে মুকাদ ইবরাহীমের বাবা তাকে বলেছিলেন।
- এর আগে আদালতকে বলা হয়েছিল যে, সন্ত্রাসী ট্যারান্ট আল নূর মসজিদে যখন হামলা করতে যান এবং নির্বিচারে গুলি করতে থাকেন তখন বাচ্চা মুকাদ তার বাবার পা আঁকড়ে ধরে ছিলেন এবং এ অবস্থাতেই ওই সন্ত্রাসী তাকে গুলি করেছিলো। সে ধারণা করেছিলো মুকাদের সাথে সাথে তার বাবাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু অলৌকিকভাবে সে বেঁচে গিয়েছিলো।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ইসলামিক সেন্টারে অবস্থিত আল নূর মসজিদে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ শুক্রবার উগ্র ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্টত্ববাদী খৃষ্টান সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট কর্তৃক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বিচার চলছে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি উচ্চ আদালতে।
চারদিন স্থায়ী হওয়া এ বিচারিক সময়ে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন আল-নূর মসজিদে নৃশংস এ হামলায় শহীদ হওয়া পরিবারগুলোর একাধিক সদস্যরা। বিচারিক আদালতে তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিচারকের সামনেই ভর্ৎসনা দিয়েছে খৃস্টান জঙ্গী ব্রেন্টনকে। প্রতিটি শহীদ পরিবারের ভাষ্য বিচারককেও অশ্রুসজল করে তুলেছে।
গত সোমবার (২৩ আগস্ট) থেকে চলমান এ বিচারিক আদালতের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী কাল বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট)। ধারণা করা হচ্ছে – কাল বৃহস্পতিবার ক্রাইস্টচার্চের এই আদালতে তাকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসী এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ট্যারান্ট নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যক্তি হয়ে প্যারোলের সম্ভাবনা ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন।
১৯৬১ সালে নিউজিল্যান্ডে শাস্তিস্বরুপ ‘মৃত্যুদণ্ড’ বাতিল করে দেওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি হতে পারে এটি। কারণ নিউজিল্যান্ডে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন সাজার ইতিহাস নেই এর আগে। ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে সেই শাস্তি দেয়া হতে পারে বলেই সবার ধারণা। তবে তিনি মৃত্যুদণ্ড পেলে ন্যায়বিচার আরও প্রশ্নাতিত হতো বলেই ধারণা অনেকের।
এদিকে আদালতে একে একে প্রায় সকল শহীদ পরিবারের ভাষ্য শোনা হয়েছে। সেখানে পরিবারগুলোর ভাষ্য ও আহতদের কথা শুনে অশ্রুসজল হয়েছেন সবাই।
ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিচারিক রায় বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে হামলার এক বছর ও বিস্তারিত ঘটনা