

আবু হামদান: করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদলের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে ঠিক কী কারণে রদবদল হতে পারে বা আদৌও হেফাজতের কমিটিতে পরিবর্তন আসবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
মূলত বাংলাদেশ হেফাজত ইসলামের মহাসচিব পদ কেন্দ্রিক এ গুঞ্জন। বর্তমানে এই পদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দায়িত্ব পালন করছেন। তবে হেফাজত ইসলামের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে কমিটিতে পরিবর্তনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, একটি বেসরকারি সংবাদপত্রে হেফাজত ইসলাম নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনকে ঘিরে এ ধরণের গুঞ্জন তৈরি হয়। “পুনর্গঠন হচ্ছে হেফাজত : বাবুনগরী মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন!” শিরোনামে চট্টগ্রামের দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনের এক পর্যায়ে বলা হয়েছে – “…নতুন কমিটিতে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে। নতুন মহাসচিব পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনের দুই যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ ও মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ।” এছাড়াও মুফতি ফয়জুল্লাহ মহাসচিব পদ পেতে লবিং করছেন মর্মে অভিযোগ আনা হয় প্রতিবেদনে।
এই সংবাদের ভিত্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে হেফাজতের কমিটিতে রদবলদের গুঞ্জন। আলোচনায় উঠে আসে মুফতি ফয়জুল্লাহ ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় পক্ষ-বিপক্ষে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি ও হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ওই প্রতিবেদনটি শেয়ার করেন। সেই পোস্টে সহস্রাধিক নেটিজেন বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
হেফাজতের জন্য মাইজভান্ডারীর দোয়া চাইলেন মুফতী ফয়জুল্লাহ !“জানা গেছে, হেফাজতের মহাসচিব পদের জন্য নজিবুল বশরের কাছে তিন…
Posted by মুহাম্মাদ মামুনুল হক Mamunul Haque on Thursday, July 2, 2020
সেখানে মাদরাসা শিক্ষক ও লেখক কামরুল হাসান নকীব লেখেন, “৫ ই মে এর সময় হেফাজতের কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল সেটা আস্তে আস্তে হেফাজতের সব নেতারা নিজেরাই নিজেদের কীর্তি খোলাসা করছে। ভবিষ্যতে আরো অনেকেই করবে।”
বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান লেখেন, “আপনাদের নীরবতার তীর প্রতিটি শুভাকাঙ্খীদের অন্তরে বিদ্ধ হচ্ছিলো মুহতারাম৷ আপনাদের কলম সমস্ত অনিয়ম দূর্তিনীতিবাজ ও ফেতনাবাজদের বিরুদ্ধে সরব থাকুক৷ এই কামনা রইলো।”
লেখক ও কলামিস্ট মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ তার এক পোস্টে লেখেন, “তৃতীয় গ্রুপের কাছে আজীবন ব্যবহৃত হলাম আমরা। এর থেকে আফসোস থাকে না৷ এরাই বড়দের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেত্নার জন্ম দিয়েছে বারবার। কাউকে দালাল, কাউকে বানিয়েছে নাস্তিক। আমরাও তাদের সূরে সূর মিলিয়ে গান গেয়েছি রাতদিন। এখনও গাইছি!”
তৃতীয় গ্রুপের কাছে আজীবন ব্যবহৃত হলাম আমরা। এর থেকে আফসোস থাকে না৷ এরাই বড়দের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফেত্নার জন্ম দিয়েছে…
Posted by হাবিবুর রহমান মিছবাহ on Friday, July 3, 2020
“আজ ওরা বাংলাদেশের শীর্ষ দু’জন মুরুব্বী আল্লামা আহমাদ শফী ও বাবুনগরীকেও মুখোমুখি দাঁড়া করালো। পুরো ক্ষতিটাই কওমীর, পুরো ক্ষতিটাই ইসলামের। অথচ আমাদের কিছু “জোয়ারের আগে পোটকা নাচা” টাইপের অতি পন্ডিত সেই ফাঁদে পা দিয়ে কেউ আহমাদ শফী আর কেউ বাবুনগরীকে আক্রমণ করে যাচ্ছে!” লেখেন মুফতী হাবিবুর রহমান মিসবাহ।
- তবে মুফতি ফয়জুল্লাহকে জড়িয়ে এমন সংবাদ প্রকাশ করায় সংবাদের কঠোর বিরোধিতা করে সংবাদকে মিথ্যাচার আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ নিজেই।
আজ শুক্রবার দৈনিক সুপ্রভাতের অনলাইন সংস্করণে ‘পুনর্গঠন হচ্ছে হেফাজত : বাবুনগরী মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন! শীর্ষক প্রতিবেদনে…
Posted by Mufti Fayezullah on Thursday, July 2, 2020
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “আজ শুক্রবার দৈনিক সুপ্রভাতের অনলাইন সংস্করণে ‘পুনর্গঠন হচ্ছে হেফাজত : বাবুনগরী মহাসচিব পদ হারাচ্ছেন! শীর্ষক প্রতিবেদনে আমার সম্পর্কে চরম আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, বিকৃত ও মানহানিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবেদনে হলুদ সাংবাদিকতা কাকে বলে এর নতুন নজির স্থাপন করা হয়েছে। আমার সম্পর্কে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য চরম অবমাননাকর ও মানহানিকর। এমন মিথ্যা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রতিবেদক কার প্ররোচনায় অথবা কাকে খুশি করার জন্য এমন জঘন্য মিথ্যাচার করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। …”
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশের অরাজনৈতিক একটি সংগঠন, যেটি ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই সংগঠনটি বাংলাদেশে ইসলাম বিষয়ক সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে।
তবে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর একটি ফোনালাপকে ঘিরে সংগঠনটিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। আনাস মাদানী জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনে আল্লামা বাবুনগরীর বিরুদ্ধে। তবে তার বিরুদ্ধে আনা জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন : আনাস মাদানীর ফোনালাপ : মুখ খুললেন আল্লামা বাবুনগরী
এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে এ ধরণের টানাহেঁচড়া করাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে আলাদা কোন মতামত দিতে রাজি হননি বলে জানান।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসকে বলেন – হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে এক ধরণের চক্রান্ত হচ্ছে তা এখন পরিস্কার। অনেকেই উড়ে এসে জুড়ে বসে হেফাজতকে ভাঙ্গনের চেষ্টা করছে। এবং এই হেফাজতে অবশ্যই আম জনতার রক্ত রয়েছে। হেফাজত নিয়ে যে কোন ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়া খুবই খারাপ হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। রক্তে জড়ানো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নিয়ে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র এদেশের তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না বলেও জানান তিনি।
হেফাজত ইসলামের কমিটিতে রদবদল আসছে কিনা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে চট্রগ্রামের মেখল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান বিষয়টিকে অনুমান নির্ভর বলে দাবি করেন।
পাবলিক ভয়েসকে তিনি জানান, “হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে রদবদল আসবে মর্মে প্রচারিত সংবাদটি অনুমান নির্ভর। হেফাজত ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, এ সংগঠনের নিজস্ব কিছু কাঠামো আছে, যে কোন মুহুর্তে, যে কেউ চাইলেই এখানে কোনো ধরণের পরবির্তন আনতে পারবেন না। এছাড়া আমাদের দেশ ও ধর্মীয় অঙ্গণ বর্তমান কিঠিন পরিস্তিতি পার করছে, এ মুহুর্তে এ ধরণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। তবুও যদি হেফাজত ইসলামের আমির এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নেন তবে আমাদের বলার কিছু নেই।”
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক হেফাজত নেতা পাবলিক ভয়েসকে বলেন, “হেফাজতে ইসলাম দেশের বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। এত বড় সংগঠনে নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা আমির ও মহাসচিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে আগের মতো সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করবে।”
এএইচ/আরএম/এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস