

গতকাল ২৯ জুন ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূরি-২ নামের একটি লঞ্চের খামখেয়ালিপনায় ডুবে যাওয়া ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ রুটের মর্নিং বার্ড লঞ্চ থেকে ১৩ ঘণ্টা পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সুমন ব্যাপারী হাসপাতালের বেডে বসে দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন – “কিসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায় ছিলাম রড ধইরা।’
তিনি এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলাপে বলেন – ‘লঞ্চ যখন ডোবে, তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম। লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সময় ঘুম ভাঙে। শুধু বুঝতে পারলাম, লঞ্চটি ধাক্কা খাইলো। আর কিছু খেয়াল নাই। কিসের মধ্যে ছিলাম আল্লাহ জানেন, তবে ভেতরে এক জায়গায় খাড়ায় ছিলাম রড ধইরা।’ এবং তিনি ‘ইঞ্জিন রুমের সাইডে বসা ছিলেন বলেও জানান’।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি।
এসময় সুমন ব্যাপারী জানান, মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি একজন ফল ব্যবসায়ী। সদরঘাটের বাদামতলী ফলের আড়তেই ব্যবসা। ব্যবসার কাজেই ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হইলো ১০ মিনিট ছিলাম, আল্লাহ যে ক্যামনে ১২-১৩ ঘণ্টা পার কইরা দিলো বলতে পারি না। আমি ভেতরে কিসের মধ্যে ছিলাম, কিচ্ছু বুঝতে পারি নাই, তবে পানির তলে ছিলাম এইটুক জানি।’
সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বাইর কইরা নিয়ে আসছে। বের হওয়ার সময় কিচ্ছু বুঝি নাই। বের হওয়ার পর আমারে উদ্ধার কইরা নিয়ে আসছে। পানির মধ্যে যখন ছিলাম, তখন সাঁতার কাটার ফোম দেখসিলাম চোখের সামনে, হাতরায় নিতে পারতেসিলাম না, পরে লোহার রড ধরে বসে ছিলাম।
‘নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল কিনা জানতে চাইলে সুমন ব্যাপারী বলেন, ‘নিঃশ্বাস আল্লাহ দিসে। না দিলে তো মইরাই যাইতাম। ওপরে যখন উঠি, তখন কিছুই বুঝতে পারি নাই, ক্যামনে উঠলাম কীভাবে উঠলাম।’
এদিকে বুড়িগঙ্গার এই লঞ্চডুবিতে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৩ জনে। উদ্ধার করা ৩৩ লাশের মধ্যে পুরুষ ২১ জন, নারী ৯ জন এবং তিনজন শিশু।
অপরদিকে বুড়িগঙ্গার মাঝনদীর তলদেশ থেকে তীরে টেনে আনা হয়েছে ডুবে যাওয়া লঞ্চ মর্নিং বার্ড। লঞ্চটি উপুড় হয়ে আছে পানিতে। বর্তমানে ডুবুরিরা লঞ্চটির ভেতরে তল্লাশি চালাচ্ছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) বেলা ১২টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র দূরন্ত জাহাজ লঞ্চটিকে রশি দিয়ে বেঁধে তীরে নিয়ে আসে।
#আরআর/পাবলিক ভয়েস