করোনা : বিশ্বব্যাপী শনাক্ত ছাড়ালো ১ কোটি ও মৃত্যু ৫ লাখের দোড়গোড়ায়

প্রকাশিত: ১:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২০

মোঃ নাজমুল হাসান : করোনাভাইরাস প্রকোপে উন্নত বা উন্নয়নশীল, সব ধরণের দেশই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্থির হয়ে আছে বিশ্বব্যবস্থা। থমকে গেছে মানুষের জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা। গোটা বিশ্বকে বদলে দিয়েছে এ ভাইরাস। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির এ যুগে এসে এত এত মৃত্যু বা লাশ বিশ্ব কখনো দেখছে কিনা তা সন্দিহান।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের একদম দোড়গোড়ায় দাড়িয়েছে। এবং বেড়েই চলছে মৃত্যু সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিলে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে শত শত প্রাণ।

একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত হয়ে শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ছাড়িয়েছে কোটিতে। অর্থাৎ এক কোটির অধিক মানুষ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানার অন্যতম ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ২৮ জুন (রবিবার) পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৬ জন।

এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৫ হাজার ৪৫০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

এ ভাইরাসের এখনও কোন নির্দিষ্ট প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক(ভ্যাকসিন) আবিষ্কার হয়নি। বৈশ্বিক এ মহামারি থেকে কবে নাগাদ মুক্তি মিলবে তার কোনো নিশ্চয়তা খুজে পায়নি গোটা বিশ্ব !

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমনের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ১১ই মার্চ বিশ্ব জুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আজ রবিবার (২৮ জুন) পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে প্রায় ১লাখ ২৭ হাজার ৯৭৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এরপরেই বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে। এ পর্যন্ত ৫৬ হাজার ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। মৃত্যুর তালিকায় তৃতীয় দেশ যুক্তরাজ্য। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪৩ হাজার ৫১৪ জনের।

আক্রান্তের তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্তের দিক দিয়ে এরপর রয়েছে যথাক্রমে ব্রাজিল, রাশিয়া ও ভারত।

এদিকে বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস উপস্থিতি শনাক্ত হয়। চতুর্থ মাসে এসেও দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের রেখা ঊর্ধ্বমুখী। পরীক্ষার তুলনায় প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যু, সংক্রমণ শনাক্তের হার সবই বেড়েই চলছে। কাছাকাছি সময়ে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন জুলাইয়ের পরে হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমন কিছুটা কমে আসতে পারে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে এ পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৯৫ জনের। একই সাথে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫৪ হাজার ৩১৮ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায় একটি দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশকের বিপরীতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ফলে সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপকতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা করা কঠিন। তবে যতটুকু তথ্য আছে, তার সঙ্গে বাস্তব প্রেক্ষাপট মিলিয়ে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।

বাংলাদেশে নমুনা পরীক্ষার তুলনায় পজিটিভ বা আক্রান্ত পাওয়ায় হার অনেক বেশি এবং সে হার বাড়তির দিকেই আছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পরিমাণ পরীক্ষার কথা বলেছে, বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকের কিছু বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরই পরীক্ষা হচ্ছে। গণহারে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে দেশে সংক্রমণের ব্যাপকতা আসলে কতটুকু, তা অনুমান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মন্তব্য করুন