

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টা নিয়ে দল থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি উঠিয়ে নেওয়া হয়।
১৯৪৯ সালের ২৩ রাজধানীর স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে দল ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তি সময়ে আওয়ামী লীগ দলের প্রতিষ্ঠা সভাপতিকে আদৌ মূল্যায়ন করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠা ইতিহাস থেকে জানা যায় – আগেই দলটির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখে দলের নেতারা। কেননা নতুন দলের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে এমন খবরে তৎকালীন সরকারি মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সম্মেলনের দুই দিন আগে তারা মাওলানা ভাসানী রোজ গার্ডেনে নিয়ে আত্মগোপনে রাখে। এরপর ২৩ জুনের সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
সম্মেলনে দলের নাম দেওয়া হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের পথচলা শুরু হয়।
১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে দলটির নাম পরিবর্তিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এ।
৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমাননের স্ব-পরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে টানা তৃতীবারের মতো সরকার গঠনকরে আওয়ামী লীগ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের প্রাচীন এই রাজনৈতিক সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল শ্লোগানও এ দলটিই প্রতিষ্ঠিত করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করা হলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবছর সীমিত আকারে ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। ঢাকায় ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের স্বল্পসংখ্যক সদস্যের প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন ।
এই কর্মসূচিতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগ-এর সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এম কামাল হোসেন উপস্থিত থাকবেন।
এদিন বিকেলে পচাঁত্তরের পনেরই আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিহত সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে মৃত্যুবরণকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন আগামীকাল রাত সাড়ে আটটায় ‘গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সব আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে দলটি।
পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে শুধু আওয়ামী লীগ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ দেশে পাকিস্তানি সামরিক শাসন, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এ দলটি।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ একুশ বছর আলোচনার বাইরে থেকেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলটির প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসে।
২০০১ এবং ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ২০০৮ সালের জরুরী শাসন পরবর্তি ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামা লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ ও অনেকটাই বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে এ দলটি।
#আরআর/পাবলিক ভয়েস