

২০২০-২১ অর্থ বছরের ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের বাজেটে সঙ্গত কারণেই এ বছর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। পাশাপাশি কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির প্রতি দেওয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। এর আগে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বছর মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট আয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। জিডিপি আকার ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত খরচ দেখা দিয়েছে তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় আগামী বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকে ৪৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে। এ হার গত বাজেটে ছিল জিডিপির ৫ শতাংশ।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে টালমাটাল দেশের অর্থনীতি। একের পর এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো। অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। চাকরি হারাতে পারে দেড় কোটি মানুষ। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় প্রায় শেষ। প্রান্তিক মানুষ খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এমন দুর্যোগের মধ্যে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের লক্ষ্য একটাই— টিকে থাকা। তাই এবারের বাজেটকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বিপুল জন আকাঙ্ক্ষা আর প্রতিক্ষা। আর এ বাজেট উপস্থাপন শুরুর মধ্য দিয়ে সে প্রতিক্ষার শেষ হতে যাচ্ছে। বাজেট বক্তব্য পুরো শেষ হলে বোঝা যাবে বাজেট থেকে কী পেল জনগণ।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বাজেট ডকুমেন্ট থেকে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় তথা আকার ধারা হচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
করোনাভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। দেশে ৬৬ দিন লকডাউন থাকার পর এখন সীমিত আকারে অফিস আদালত খুললেও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে বলেই দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস থেকে জানা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আগামী বাজেটের আকার বা ব্যয় ও আয়ের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নজর দিলে করোনার কোনো প্রভাবই পাওয়া যাবে না। তবে বাজেটে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে বাস্তবায়ন অযোগ্য বলছেন অর্থনীতিবিদরা। বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান সংস্থা এনবিআরও বলছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
এদিকে করোনাকালীন এই দুঃসময়ে আয়ের মূল উৎস রাজস্ব আদায় তলানিতে ঠেকলেও বেড়েছে ব্যয়ের খাত। তাই আসছে বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করসমূহ থেকে রাজস্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকে এবারই প্রথম দেশের ইতিহাসে মোট বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর আগের বছরগুলোতে সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ হারে ঘাটতি ধরে বাজেট প্রণয়ন করা হতো।
প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেট গতানুগতিক হচ্ছে না। বরং সরকারের অতীতের অর্জন ও উদ্ভূত পরিস্থিতির সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এসব অগ্রাধিকার খাতের পাশাপাশি বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন প্রস্তাব থাকবে। ২০০৯ সাল থেকে একাধিক্রমে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটি হচ্ছে দ্বিতীয় বাজেট।
করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এবারের বাজেট অধিবেশনে মিডিয়া কাভারেজের জন্য সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নেই।
আরআর/পাবলিক ভয়েস