নতুন নিয়মে লকডাউন : ঢাকা ও কক্সবাজারে কার্যকর আজ থেকে

প্রকাশিত: ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২০
লকডাউন বাংলাদেশ। ছবি : পাবলিক ভয়েস।

করোনাভাইরাস সংক্রমন বাড়তে থাকায় নতুন নিয়মে শতভাগ লকডাউনে যাচ্ছে সরকার। আজ থেকেই রাজধানী ঢাকায় এই লকডাউন শুরু হওয়ার কথা। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানে লকডাউন কার্যকর হবে এলাকাভিত্তিক। স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে রাজধানীর যেসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে, সেসব এলাকা আজ-কালকের মধ্যেই লকডাউন করা হবে।

এছাড়াও কক্সবাজারকে ‘রেড জোন’ উল্ল্যেখ করে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউন শুরু করা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার শহরে নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে রেড জোন ঘোষনা করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড এই রেড জোনের আওতায় থাকবে। আজ শনিবার থেকে ১৪ দিনের জন্য কঠোরভাবে লকডাউন থাকবে। বৃহস্পতিবার সন্ধায় এ ঘোষনা দেন জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন।

এর ফলে আজ রোববার থেকে কক্সবাজার শহরে সকল আগমন ও বহির্গমন নিষিদ্ধ হলো। জেলা প্রশাসক জানান, আদেশ অমান্য করলে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। কাউকে বাইরে দেখলেই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তার জন্যে মাঠে থাকবে বারোটি ওয়ার্ডে বারোটি টিম, সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সুশিল সমাজ প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার তরুণ ও গন্যমান্যদের নিয়ে ৩০ জনের একটি করে কমিটি করে দেয়া হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে যারা এলাকার সবার চলাচল নিয়ন্ত্রন করার দ্বায়িত্বে থাকবেন।

ঢাকার বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় সরকার রাজধানী ঢাকাকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ঢাকার যে যে এলাকায় বেশি সংক্রমণ ঘটেছে এবং বেশি রোগী আক্রান্ত সেসব এলাকা চিহ্নিত করার কাজ প্রায় শেষ করা হয়েছে। এখন বিশেষজ্ঞদের অভিমতের ভিত্তিতে ওই এলাকাগুলো লকডাউন করে দেওয়া হবে। এরপর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে সেসব এলাকা একই পদ্ধতিতে লকডাউন করা হবে।

এবারের লকডাউনে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলেও জানানো হয়। লকডাউন করা ‘রেড জোন’ এর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কাউকেই ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ঢাকাসহ সারা দেশের বড় বড় শহর থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত প্রায় সব এলাকায় প্রতিদিন শনাক্ত হওয়া আক্রান্তদের মোবাইল নম্বর চিহ্নিত করে ওইসব এলাকার ম্যাপ তৈরি করছেন। রাজধানীতে এ কাজ প্রায় শেষ। দেশের অন্যান্য এলাকায় এখনো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একই প্রক্রিয়ায় সারা দেশে এই লকডাউন কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, সারা দেশের চিত্রটা তৈরি করতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তাই বৃহস্পতিবার নাগাদ সারা দেশের ঘোষণা আসবে।

দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর সরকার ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এই ছুটির সময় পরবর্তীতে দফায় দফায় বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ ৬৬ দিনের এই ছুটির মূল উদ্দেশ্যই ছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো। কিন্তু সরকার সাধারণ ছুুটি দিলেও লকডাউন ঘোষণা না করায় কার্যত ওই ছুটির সময়ে লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এমনকি ছুটিকালীন সময়ে গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে আসেন মালিকপক্ষ।

তারপর আবার তাদের ফেরতও পাঠান। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয় বিভিন্ন মহলে। এরপর ঈদের সময় রাজধানী থেকে লোকজন গ্রামে ছুটে যায় কোনো রকম নিয়ম না মেনেই। আবার ছুটি শেষ হলে গ্রাম থেকে দল বেঁধে মানুষজন ঢাকায় চলে আসেন। এসব যাত্রায় কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। ফলত করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে গত কয়েক দিনের পরীক্ষায় করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে দুশ্চিন্তায় ফেলে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। সভায় উপস্থিত প্রায় প্রত্যেকেই নতুন করে লকডাউনের পক্ষে মত দেন।

এই সভার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সারা দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেগুলোতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা হবে।

#আরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন