করোনা সংক্রামনে ২০ তম তালিকায় বাংলাদেশ : আক্রান্ত বেশি তরুণরা

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২০

বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সাধারণ ছুটি তুলে দেওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনোদিনই আক্রান্ত দুই হাজারের নিচে নামেনি। আজ দুপুরের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে।

আক্রান্তের দিক দিয়ে সারাবিশ্বে এখন বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ ২০-এ! এই পরিসংখ্যানই বলছে, কতটা ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে বাংলাদেশ কিংবা সামনে কতটা আতঙ্কজনক দিন কাটাতে হবে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনা করে দেখা গেছে – দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ ও যুবকরা।

আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, তরুণ ও যুবকদের করোনায় আক্রান্তের হার ২৮ শতাংশ। এরপরই আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছেন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। তাদের আক্রান্তের হার ২৭ শতাংশ। তরুণ-যুবকরা বেশি আক্রান্ত হলেও মত্যু হারে এগিয়ে ৬০ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন আক্রান্ত নিয়ে একুশতম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। তবে শুক্রবার আরও ২ হাজার ২২৮ নতুন আক্রান্ত যোগ হওয়ায় দেশে এখন রোগী দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৩৯০ জনে। এতেই বাংলাদেশ উঠে এসেছে আক্রান্ত সংখ্যার দিক থেকে বিশতম তালিকায়। ৬৫,৪৯৫ জন আক্রান্ত নিয়ে বাংলাদেশের আগে আছে কাতার। এবং ১৮ নম্বর স্থানে থাকা করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৮৩,০২৭ জন।

বাংলাদেশ ওপরে উঠে আসায় একুশতম স্থানে নেমে গেছে ৫৮ হাজারের বেশি আক্রান্তের বেলজিয়াম। আজ পর্যন্ত যথারীতি শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে আমেরিকা। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১,৯২৬,২৬৯ জন। মারা গেছে ১১০,২৫৫ জন। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্রাজিল। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৮,৫৫৪। তৃতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৯,৮৩৪ জন। সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৫৬ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার।

করোনা সংক্রমণের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন ।

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘লিঙ্গভেদে বাংলাদেশে শনাক্তের হার পুরুষ ৭১ শতাংশ এবং নারী ২৯ শতাংশ। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ১৭ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৮ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৩ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরই আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। এই বয়সী মানুষদের অনেক বেশি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। এই বয়সের মানুষেরা কর্মস্থলে বেশি থাকেন। বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করেন, কাজের জন্যই হোক বা অন্য কারণেই হোক।

যেহেতু তরুণ বয়স, তারা অনেক সময় সতর্কতা ও সচেতনতাকে ঠিকভাবে গ্রহণ করেন না। এ জন্য ২১ থেকে ৩০ এবং ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারা সতর্ক হোন, সচেতন থাকেন। আপনার কারণে যেন আপনার পরিবারের অন্য কেউ যেন ঝুঁকিতে না পড়ে।’

করোনায় মৃতদের বয়সের হার তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘১ থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃতের হার শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সীদের ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬১ বছরের বেশি বয়সীদের মৃত্যুর হার ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর হার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি। কাজেই এই বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, আপনারাও অনেক বেশি সচেতন থাকবেন।’

#আরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন