

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির ওপরে পুলিশি নির্যাতন ও পুলিশ কর্তৃক তাকে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ও অগ্নি সংযোগ অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে বিক্ষোভকারীরা গতরাতেও একটি পুলিশ ফাঁড়িতে এবং আশপাশের ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে। তার আগেই পুলিশের লোকজনকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয় এবং ঐ অগ্নিসংযোগের সময় কিংবা তার পরে সেখানে পুলিশ কিংবা দমকল বাহিনীর কোন লোকই ছিল না। সেন্ট পলের পুলিশ বলছে তাদের উপর পাথর এবং বোতল ছুঁড়ে মারা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতিকে শান্ত করার উদ্যোগ না নিয়ে বরং টুইট করে উস্কানির পথ বেছে নিয়েছেন।
তিনি বিক্ষোভকারীদের “Thugs ” বলে অবিহিত করেছেন। একই সাথে তিনি বলেছেন, লুটতরাজ করা হলে গুলি চালানো হবে। এর আগে বৃহষ্পতিবার টুইটার মারফত জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছিলেন তিনি। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার বর্ণবাদী ঘটনায় সম্পৃক্ত হয়েছেন।
ওদিকে প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, নাম নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উস্কানি ছড়িয়ে দেবার জন্য দোষারোপ করেন। তিনি বলেন অবাস্তব টুইটার করার সময় এটা নয়, এটা সত্যিকার নের্তৃত্ব দেবার সময়।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিসে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছেI যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস শহরের মেয়র জ্যাকব ফ্রে গত রাতে সেই শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। মিনেসোটার গভর্ণরের অনুরোধে ৫০০ জন ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যকে সতর্ক রাখা হয়েছে এবং তাদেরকে মিনিয়াপলিস, সেন্ট পল এবং আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হবে।
মেয়র ফ্রে আজ ভোরে বলেছেন, শহরটি অনেক কষ্ট এবং ক্ষোভের মধ্যে রয়েছে তবে পুলিশের হেফাজতে থাকা একজন আফ্রিকান-আমেরিকান লোকের মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে লুঠতরাজ এবং অগ্নিসংযোগ করা গ্রহণযোগ্য নয়। ফ্রে বলেন ক্ষতিগ্রস্ত সম্পত্তিগুলোও আমাদের সমাজের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।
মিনিয়াপলিসের পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ব্যাপারে অবাস্তব সাফাই গেয়ে বলেন – ফ্লয়েড দেখতে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির মতো ছিল যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে সে কুড়ি ডলারের একটি নকল নোট খাবার দোকানে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ বলে ফ্লয়েড গ্রেপ্তার ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। তবে একজন পথিকের মোবাইল ফোনে ধারণ করা চিত্রে দেখা যাচ্ছে পুলিশকে সে বলছে সে শ্বাস নিতে পারছে না। সেলফোনের ঐ ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে শ্বেতাঙ্গ পুলিশটি ফ্লয়েডের গলার উপর হাঁটু গেড়ে বসে ছিল। ফ্লয়েডের হাত ও বাঁধা ছিল।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিউ ইয়র্ক সিটি সহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। কলোর্যাডোর ডেনভারে রাজ্য সংসদের কাছে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভে বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনা যায়। টুইটারে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে একটি এসইউভি গাড়ি ভিড়ের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একজন বিক্ষোভকারী পড়ে যায়।
এদিকে মিনিয়াপলিসের পুলিশ বিভাগ ফ্লয়েডের গ্রেপ্তারে সঙ্গে সম্পৃক্ত চার জন পুলিশের সকলকেই বরখাস্ত করেছে। মিনিয়াপলিস পুলিশ এবং হেনেপিন কাউন্টির অ্যাটর্নি দপ্তরের সঙ্গে, এফবিআইও এই তদন্তে যুক্ত হয়েছে। বিচার বিভাগ বলছে ঘটনার তদন্ত অগ্রাধিকার পাবে। ঐ শহরের পুলিশ ইউনিয়ন দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌছে পুলিশকে নিন্দে জানানোর আগে জনগণকে তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছে। যদিও আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতনের ব্যাপারে তেমন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা