
বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে শুধু গত একদিনের ব্যবধানেই ৭৯০ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যা একদিনের হিসাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তবে মৃতের সংখ্যা বেশ কয়েকদিন ধরে কিছুটা কমে এসেছে। যদিও বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে প্রকৃত মৃতের সংখ্যার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে গত ৮ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ৩৮৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে অনেকের নমুনা সংগ্রহের পর করোনা পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। আবার অনেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের কোনো টেস্টই করা হয়নি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সেখানে গত চার দিনের ব্যবধানে করেনার উপসর্গ নিয়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চার জনের কোভিড-১৯ টেস্ট করলে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। বাকিদের নমুনা সংগ্রহ ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, গত ২ মে থেকে শুরু করে পরবর্তী চার দিনে ওই ওয়ার্ডে ২৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চার জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। বাকি ২৪ জন করোনা পজেটিভ ছিল কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে তাদের সবার মধ্যে বিভিন্ন কো-মরবিড কন্ডিশন (অন্যান্য রোগ) ছিল। আবার অনেকে শুধু শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাই তাদের করোনা টেস্ট করা হয়নি। তাছাড়া বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে চাইলেই সবার টেস্ট করা সম্ভব না। টেস্ট করাতে চাইলে ডেডবডিগুলো রাখতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে সব মিলিয়ে মাত্র ১২টি মৃতদেহ রাখার ব্যবস্থা আছে। এ জন্যই শুধু হাইলি সাসপেক্টেটেডদের ডেডবডি রেখে স্যাম্পল নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যোগ করেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, গত ২ মে থেকে শুরু করে পরবর্তী চার দিনে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মাত্র ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অসংখ্য রোগীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের বেশিরভাগেরই কোনো টেস্ট করা হচ্ছে না। আবার অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। যাদের অনেকেরই করোনার উপসর্গ ছিল।
বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। এক্ষেত্রে মৃত্যুর আগে কিংবা পরে, পরীক্ষার মাধ্যমে যখন একজন ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ রোগ ধরা পড়ে তখনই সেই তথ্য বুলেটিনে আপডেট করা হয়।
তিনি বলেন, শুধু উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেই ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, এমনটা বলা যায় না। কারণ মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে দেখা যায়, অনেকেরই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশে দৈনিক গড়ে ২ হাজারের মতো মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে আবার ২০০ রোগী যক্ষ্মায় মারা যান।২৪ নিউজ পেবার বাংলা ।
এমএম/পাবলিকভয়েস

