ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনার চেয়েও করোনায় বেশি মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২০
আমেরিকার করোনা যুদ্ধ। ছবি : পাবলিক ভয়েস

বর্তমান বিশ্বের মহাপরাক্রমশালী দেশ ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংক্ষেপে আমাদের নিকট আমেরিকা নামেই অধিক পরিচিত।

মানবিক সহায়তা বা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যতোটা  অগ্রগামী তারচে বেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাংদেহী কর্মকাণ্ডের কারণে আমেরিকার প্রতি সারা বিশ্বের মানুষের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সারা বিশ্বে ইরান, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন নিয়ে আমেরিকার ভূমিকার রয়েছে কঠোর এবং যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা। বিভিন্ন দেশে দ্বিধাবিভক্তকরণ রাজনীতি, কূটকৌশল, সামরিক আগ্রাসন, অর্থনৈতিক জবরদস্তি ও আঞ্চলিক রাজনীতির অপকৌশলে সিদ্ধহস্ত মার্কিন প্রশাসন।

৪ বছর পর সরকার বা ৮ বছর পর পর সরকার পরিচালনাকারী দল ও নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও দেশটির বিদেশনীতির কোনো উল্লেখ্যযোগ্য পরিবর্তন হয় না বললেই চলে। পৃথিবীর যেখানেই আন্তঃযুদ্ধ কিংবা পক্ষীয় যুদ্ধ চলমান আছে বা হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নেই এরকমটা খুবই বিরল।

সোভিয়েত-জার্মান কিংবা তৎপরবর্তী দুই কোরিয়ার যুদ্ধে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী অংশগ্রহণ। এমনকি দুই কোরিয়ার সামরিক যুদ্ধ ১৯৫৩ সালে যুদ্ধ বিরতি চুক্তির মাধ্যমে বন্ধ হলেও এখন পর্যন্ত দুই কোরিয়ায় উত্তেজনার পেছনে আমেরিকার প্রচ্ছন্ন হাত রয়েছে। অধিকাংশ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কিছু অর্জন করতে পারলেও ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার শোচনীয় পরাজয় ছাড়া কোনো অর্জন ছিলো না।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী।

মার্কিন শক্তি দ্বিখন্ডিত ভিয়েতনাম গঠনের প্রয়াস চালায়। সফলও হয় প্রাথমিকভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দুই ভিয়েতনাম এক হয়। যুদ্ধে মার্কিন শক্তির পরাজয় হয়। যুদ্ধে ৩২ লক্ষ ভিয়েনামিসহ প্রায় ৪০-৪৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়।

শুধামাত্র আমেরিকান সৈন্য মারা যায় ৫৮ হাজার। এছাড়াও আহত ও পঙ্গু হয় প্রায় ৩ লক্ষ মার্কিন সেনা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর এতো বড় ক্ষয়ক্ষতি আর কোনো যুদ্ধ হয়নি এখন পর্যন্ত।

মহামারী করোনভাইরাস সেই অতীত ইতিহাসকেই ছাপিয়ে গেছে। মহাপরাক্রমশালী আমেরিকায় মহামারী করোনাভাইরাসে নিহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে ৬০ হাজারের ঘর ছুঁয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সর্বশেস চিত্র আপডেট দেয়া চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এর দেয়া তথ্যমতে এই রিপোর্ট লেখার সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ৩.৩০টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত  ১.৩০টা) দেশটিতে ৬০ হাজার ৬৪০ জন মানুষ মারা গেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমর শহরের ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’ এ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে।

জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানায়, বুধবার দুপুর পর্যন্ত করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮ হাজার ৩৬৫ জন মারা গেছে। যা জাতীয় আর্কাইভের তথ্যানুযায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধে এবং যুদ্ধকালীন অন্যান্য দুর্ঘটনায় ৫৮ হাজার ২২০ মার্কিন সেনার মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

যেই যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামের নিয়মিত বাহিনী এবং ভিয়েট কং গেরিলা বাহিনী মিলিয়ে দেশটির ১২ লাখ সৈন্য মারা গিয়েছিলো। আর বেসামরিক লোক মারা গিয়েছিলো প্রায় ২০ লক্ষ।

অন্যদিকে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেই চিরবৈরি চিনের প্রতিবেশী কমিউনিস্ট দেশ ভিয়েতনামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭০ জন। যেখানে এখনো কারো মৃত্যু হয়নি।

মহামারী করোনভাইরাস চীনে উৎপত্তি হলেও সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র। চিনে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ হাজার ৬৩৩ জন লোক মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মৃতের সংখ্যার তুলনায় যা নগন্যই।

এছাড়া চিনে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৮৫৮ জন। আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৭৭ হাজার ৯৯৪ জন। অর্থাৎ বর্তমানে দেশটিতে চিকিৎসাধীন আছেন ২৩১ জন।

এছাড়াও বিশ্বব্যাপী বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৬ জন, সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৬ জন এবং মারা গেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৭ জন।

তথ্যসূত্র: ‘উইকিপিডিয়া’, ‘চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশ ‘ ও ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’

/এসএস

মন্তব্য করুন