বুধবার: সর্বোচ্চ ৬৪১ জন আক্রান্তের রেকর্ড, মৃত্যু ৮

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ২:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২০
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আপডেট। ছবি : পাবলিক ভয়েস।

আজ বুধবার (২৯ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত সবাই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। আজকের মৃতদের ৬ জন পুরুষ এবং ২ জন মহিলা। এরমধ্যে ৬ জন ঢাকার মধ্যেই। এছাড়া দেশে এখন পর্যন্ত মৃতদের ১৩৭ জনই ঢাকা বিভাগের।

এছাড়া এদিন নতুন আক্রান্ত হয়েছে ৬৪১ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ১৬৩ জনের এবং মোট আক্রান্ত হয়েছে ৭১০৩ জন।

আজ ‍বুধবার দুপুরে সংবাদ বুলেটিনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টা আইসোলেশন থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১১ জন, এখন পর্যন্ত মোট ১৫০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৪৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৬৪১ জন শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৫৩৬৯টি।

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে সোয়া দুই লাখ ছুঁই ছুঁই। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ২ লক্ষ ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ বুধবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৫৯ হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।

বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে ঝুঁকি।

এদিকে  মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় নতুন করে ব্যাপকতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এর আগে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কাল তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। যখন করোনা সংক্রমণ থামবে তখন খুলব।

কিন্তু এরই মধ্যে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন করে সংক্রমণের ব্যাপকতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এখনো লকডাউনের যথাযথ প্রয়োগ এবং মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানা চালু করায় এর চরম মূল্য দিতে হবে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর করোনাভাইরাসের হটস্পট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তিন জেলাতেই সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। আর বেশিরভাগ কারখানা এখানেই অবস্থিত। এখন শ্রমিকদের যদি কারখানায় কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে ভাইরাসটির সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করবে। একজন আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে বাকি সবাই সংক্রমিত হবে।

সংশ্লিষ্ট খবর: গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় চরম মূল্য দিতে হবে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ কছেরা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। সম্মিলিত সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ জন।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার ১৩৯ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ জন।

বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় সময় আজ বুধবার (২৯ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৫৯ হাজার ২৬৬ জন মানুষ মারা গেছে। পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৫ জন। দেশটিতে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।

বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আক্রান্ত ও মৃত উভয় দিক থেই সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র।

এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)

এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৬ হাজার ৩৫৯ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬৮ হাজার ৯৪১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১ হাজার ৫০৫ জন। ইতালিতে সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৩৮২ জন।

প্রতিনিয়ত আক্রান্ত এবং মৃত্যু সংখ্যার কমতির দিকে থাকায় আশার আলো দেখছে ইতালির সরকার ও জনগণ।

এরইমধ্যে গত রোববার (২৬ এপ্রিল) ইতালির প্রধামন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে লকডাউন শিথিল করা ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৪ মে থেকে ১৮ মে এর মধ্যে ধীরে ধীরে সীমিত পর্যায়ে লকডাউন তুলে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন কন্টে।

স্থানীয় সময় রোববার রাত পৌনে ১০টার দিকে (বাংলাদেশ সময় সোমবার রাত ২টা) এ খবর দিয়েছে ইউরোপ ভিত্তিক জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক ‘দ্য লোকাল ইতালি’।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী কন্টে জানান, আগামী সপ্তাহে ৪ মে থেকে রেস্তোরা খোলা হবে এবং জানাযার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে রেস্তোরাগুলোতে ভিড় জমানো যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করতে হবে এবং ঘরে বসে খেতে হবে। এছাড়া জানাযায় নিকটাত্মীদের ১৫ জন অংশ নিতে পারবে।

তিনি আরো জানান, ১৮ মে থেকে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কিছু জোন, পার্ক, গ্রন্থাগার, জিম, জাদুঘরউৎপাদন শিল্প, নির্মাণ খাত ও পাইকারি দোকান ও ক্রীড়া প্রশিক্ষণের কিছু অংশ খুলে দেওয়া হবে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি ভালো না হওয়ায় স্কুলগুলো আগামী সেপ্টেম্বরের আগে খোলা হবে না।

কন্টে বলেন, ‘আমরা আপনাকে আপনার দ্বিতীয় বাড়ি বা ভিলায় ফিরে যেতে বা পাবলিক পার্কগুলিতে ঘুরে দেখার অনুমতি দেব। তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি অন্য কারো বাড়িতে বেড়াতে যাবেন’।

প্রধানমন্ত্রী কন্টে আরো জানান, আগামী ১ জুন থেকে বার, রেস্তোঁরা, হেয়ারড্রেসার এবং বিউটি পার্লার খোলা হবে। তবে গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হলে সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে হবে এবং সেই সাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৯ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩ হাজার ৮২২ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ৬০৯ জন।

/এসএস

মন্তব্য করুন