

মহামারী করোনাভাইরাসে মারত্মকভাবে বিপর্যস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সহায়তা পাঠিয়েছে তুরস্ক। আজ মঙ্গলবার সকালে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে একটি কাগো জাহাজ ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে আঙ্কারা ছেড়ে যায়।
তেরোতম শতাব্দীর বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব সূফী জালালুদ্দিন রুমি রহ. এর একটি অমূল্য বাণী ‘যেখানে ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, সেখানে ধন-সম্পদের আশা রয়েছে’- ইংরেজী ও তুর্কি ভাষায় এ আশার বাণী লিখে পাঠিয়েছে তুরস্ক।
ওয়াশিংটনের অনুরোধে সহায়তা পাঠানো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে, ৫ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ৪০০ এন৯৫ মাস্ক, ৪ হাজার ওভারলস, ২ হাজার লিটার জীবাণুনাশক, ১৫০০ গগলস (চশমাবিশেষ) এবং ৫০০ ফেস শিবল (সম্পূর্ণ মুখ ঢাকার বিশেষ মাস্ক)।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসী আকার জানান, যুক্তরাজ্যের মতোই সমান প্যাকেজে গূরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরঞ্জামবাহী একটি কার্গো উড়ো জাহাজ (সামরিক বিমান) ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সকালে রাজধানী আঙ্কারা ছেড়েছে।
মন্ত্রী জানান, সামরিক কার্গো বিমান ‘কোকা ইউসুফ’ আঙ্কারের ইটাইমসগাট মিলিটারি বিমানবন্দর থেকে সহায়তার প্যাকেজগুলি বোঝাই করে যাত্রা শুরু করেছিল।
এদিকে তুরস্কের এই উদার সহয়তার ব্যাপক প্রশংসা করেছে আমেরিকা। তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্যাটারফিল্ড এই সহায়তাকে তুরস্ককের উদারতা উল্লেখ্য করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমার দেশে ওয়াশিংটনে পৌছেবে।
স্যাটারফিল্ড বলেন, ‘সঙ্কটকালে করোনা লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার মতো সম-মনের সহযোগী এবং অংশীদারদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় দ্রুত এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া বিকাশের মূল চাবিকাঠি। আমাদের মধ্যে কেউই একা এটি করতে পারে না। সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমরা এটি মোকাবেল করতে পারবো’।
দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য প্রশংসা করে ওয়াশিংটন ডিসি পারস্পরিক অগ্রাধিকার নিয়ে আঙ্কারার সাথে সহযোগিতা বজায় রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্যাটারফিল্ড।
এসময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানকেও ধন্যবাদ জানান স্যাটারফিল্ড। এরদোগানকে উদ্দেশ্য করে স্যাটারফিল্ড বলেন, ‘আমেরিকান জনগণের প্রতি আপনার সমর্থন এবং বন্ধুত্বের জন্য তুরস্কের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ’।
এর আগে রাষ্ট্রপতি এরদোগান গতকাল সোমবার ঘোষণা করেছিলেন, তুরস্ক করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার প্রয়াসে সহায়তার জন্য মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠাবে।
এরদোগান বলেন, ‘আমরা এমন এক সমযয়ে আছি যখন উন্নত দেশগুলিও তুরস্কের সমর্থন চাইছে। আমরা বাল্কান থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূগোলকে আমাদের সমর্থন দিয়েছি। আমরা কালকে (আজ মঙ্গলবার) যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সহায়তাসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠাবো’।
উল্লেখ্য, তুরস্ক এখন পর্যন্ত ১০০টি দেশ থেকে সাহায্যের আবেদ পেয়েছে। এরমধ্যে ৫৭টি দেশে ইতোমেধ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাঠিয়েছে তুরস্ক। যুক্তরাজ্য, ইতালি এবং স্পেনের মতো করোনা বিপর্যস্ত দেশগুলিতে পৌঁছে গেছে তুরস্কের সাহায্য।
এছাড়াও ফিলিস্তিন, আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, গিনি, সোমালিয়া, কলম্বিয়া, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়াতেও সাহায্য পাঠিয়েছে তুরস্ক। এমনকি ইসরাইলেও সাহায্য পাঠিয়েছের এরদোগান। তবে ইসরাইলে পাঠানো সামগ্রী বিক্রি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ, ইতালির পর বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক বিপর্যস্ত দেশে আমেরিকা। দেশটিতে এখন আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা) সর্বোচ্চ ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫০৮ জন মানুষ মহামারী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন ৫৭ হাজার ৪৯ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪২২ জন।
তুর্কি দৈনিক ডেইলি সাবাহ অবলম্বনে শাহনূর শাহীন এর অনুবাদ
/এসএস