
আজ রোববার (২৬ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪১৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ১৪৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৫৪১৬ জন।
আজ রোববার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টা সুস্থ হয়েছেন ৯ জন, এখন পর্যন্ত মোট ১২২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ২ লক্ষ ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ রোববার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৫৫ হাজার ছুঁই ছুঁই।
বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩৪৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৪১৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যাবতীয় গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে জামাত এবং জুমার নামাজেও উপস্থিতি একেবারে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তারাবীহ সংক্রান্ত বিবৃতি দিয়েছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।
এদিকে আজ রোববার সীমিত পরিসরে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ‘গার্মেন্টস খুলতে পারলে মসজিদ কেন নয়’ সামাজিক মাধ্যমে এমন প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সীমিত পরিসরে অঞ্চলভিত্তিক কিছু পোশাক শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেছে জানিয়েছে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।
বিজিএমইএ বলেছে, তবে কারখানা খুললেও আপাতত ঢাকার বাইরে তথা গ্রামে যাওয়া শ্রমিকদের না আনার অনুরোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকদের। সেইসঙ্গে গ্রামে যাওয়া শ্রমিকদের ছাঁটাই না করে চলতি এপ্রিল মাসের বেতন পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি।
সংশ্লিষ্ট খবর: শর্ত দিয়ে সীমিত পরিসরে খুলছে কারখানা
শনিবার বিজিএমইএ তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়, সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে বিজিএমইএ সীমিত পরিসরে জোনভিত্তিক কিছু কারখানা খোলার পরামর্শ দেবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কারখানার আশপাশে বসবাসকারী শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
সাধারণ নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের ছাঁটাই না করতে সদস্যদের অনুরোধ করা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে অনুপস্থিত শ্রমিককে এপ্রিল মাসের বেতন পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করা হলো।
তবে এমন পরিস্থিতিতে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে বিশিষ্টজনদের মধ্যেও। বিজিএমই এর নির্দেশনা কতোটা বাস্তাবায়ন হবে সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
সৌদি আরবে তারাবী : অনুমতি নেই সাধারণদের, নামাজ হবে ১০ রাকায়াত
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে হয়ে গেলো প্রথম তারাবীহ (ভিডিও)
প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ শনিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৬ জন।
বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৩০৮ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩১ জন।
বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৫৪ হাজার ২৬৫ জন মানুষ মারা গেছে। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬২ জন।
বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আকান্তের সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৬ জন।
এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)
এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৬ হাজার ৩৮৪ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৬৩ হাজার ১২০ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫১জন।
অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৯ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২২ হাজার ৯০২ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৯৫ হাজার ৭০৮ জন।
ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত ৬ এপ্রিল তা ১০ হাজারে পৌঁছায়। তখন থেকে মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংখ্যাটি হয়ে যায় ২০ হাজার। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর দেশটিতে ৩৮ দিনে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এতো অল্প সময়ে এতো বেশি আনুপাতিক হারে মৃত্যু হয়নি আর কোনো দেশেই। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দু’একদিনের মধ্যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ পেরিয়ে যেতে পারে।
/এসএস

