শুক্রবার: একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছাড়িয়ে ৫০৩ জন, মৃত্যু ৪

রমজানে সংযম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ

প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২০

আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৫০৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ১৩১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪৬৮৯ জন।

আজ ‍শুক্রবার দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে এসব তথ্য জানিয়েছেন আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা

তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টা সুস্থ হয়েছেন ৪ জন, এখন পর্যন্ত মোট ১১২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ১ লক্ষ ৯১ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।

বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩৬৮৬ টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫০৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৭৭৬ পরীক্ষা হয়েছে।

ডা. নাসিমা সুলতানা আরো জানান, আজকে মৃতদের ৪ জনই পুরুষ এবং সবাই ঢাকার বাসিন্দা। ব্রিফিংয়ে ডা. নাসিমা সুলতানা রমজানে সংযম এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন। ১২ জনের বাইরে অন্যদেরকে ঘরে তারাবীহ পড়ার আহ্বান জানান।

এদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যাবতীয় গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে জামাত এবং জুমার নামাজেও উপস্থিতি একেবারে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তারাবীহ সংক্রান্ত বিবৃতি দিয়েছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী  জানান, আসন্ন রমজানে দেশের সব মসজিদে তারাবির নামাজ চালু থাকবে। ইমাম, মুয়াজ্জিন, হাফেজসহ সর্বমোট ১২ জন মুসল্লি এতে অংশ নিতে পারবেন বলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সীমিত আকারে দেশের মসজিদগুলোতে তারাবী চালু থাকবে। প্রত্যেক মুসল্লী ঘর থেকে অজু করে আসবেন। অসুস্থ বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ আদায় করবেন। তারাবীতে সর্বোচ্চ ১২ জন মুসল্লি উপস্থিত থাকতে পারবেন।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের মসজিদগুলোকে মুসল্লি সংখ্যা সীমিত করা হয়। মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সমন্বয়ে পাঁচ ওয়াক্তের জামাতে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে এবং জুমার জামাতে ১০ জন করে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

বুধবার কওমি মাদরাসার শীর্ষ সংস্থা আল হাইয়াতুল উলাআর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে আলেমদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ফোনে মতবিনিময় করেছেন।

সেই আলোচনায় মক্কা-মদিনায় মসজিদুল হারামাইনের আদলে রমজানে তারাবিসহ অন্যান্য নামাজের জামাতের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান আলেমরা।

সৌদি আরবে তারাবী : অনুমতি নেই সাধারণদের, নামাজ হবে ১০ রাকায়াত

মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে হয়ে গেলো প্রথম তারাবীহ (ভিডিও)

প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৪ জন।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৬ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৭ লাখ ২৩ হাজার ১৯৬ জন।

বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে আজ। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৫০ হাজার ২৪৩ জন মানুষ মারা গেছে। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮৫ হাজার ৯২২ জন।

বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আকান্তের সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৯ জন।

এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)

এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৫ হাজার ৫৪৯ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫৭ হাজার ৫৭৬ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৩ জন।

অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ১৩ হাজার ০২৪ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২২ হাজার ১৫৭ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮৯ হাজার ২৫০ জন।

ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত ৬ এপ্রিল তা ১০ হাজারে পৌঁছায়। তখন থেকে মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংখ্যাটি হয়ে যায় ২০ হাজার। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর দেশটিতে ৩৮ দিনে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এতো অল্প সময়ে এতো বেশি আনুপাতিক হারে মৃত্যু হয়নি আর কোনো দেশেই। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দু’একদিনের মধ্যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ পেরিয়ে যেতে পারে।

বুধবার: আজ আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯০

/এসএস

মন্তব্য করুন