বৃহস্পতিবার: আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৪১৪

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২০

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) মহামারী করোনাভাইরাসে দেশে নতুন করে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৪১৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হলো ১২৭ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৪১৮৬ জন।

আজ ‍বৃস্পতিবার  দুপুরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক।

এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টা সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন, এখন পর্যন্ত মোট ১০৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ব্রিফিংয়ে আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা প্রায় পৌনে দুই লাখ। প্রতিমূহুর্ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। ১ লক্ষ ৮৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় অর্ধলক্ষ ছুঁতে চলছে মহামারী এ ভাইরাসের মৃতের সংখ্যা।

বাংলাদেশেও প্রতিদিন বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সেই সাথে পরীক্ষা যতো বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে।

গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৩৪১৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৪১৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। আইইডিসিআর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, আজকে মৃতদের ৫ জন পুরুষ ও দুজন মহিলা এবং সবাই ঢাকার বাসিন্দা। ৪ জনের বয়স ষাটের উপরে। এছাড়া দুজনের বয়স পঞ্চাস থেকে ষাট পর্যন্ত এবং একজনের বয়স একচল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে।

গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে গেছেন ১২৩ জন অদ্যবধি মোট আইসোলেশন ৯৯৫ জন। আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৮ জন মোট ছাড় পেয়েছেন ৬২২ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ৩৪২৯ জন মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৩ জন।

২৪ ঘন্টায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ৫৪৮ জন মোট ৭৮৮৭ জন। হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ৩৯৭৮ জন এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫০ জন। এছাড়া কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া হয়েছেন ৩৮৪১ মোট ছাড় পেয়েছেন ৮৪ হাজার ০৪৫ জন।

এদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যাবতীয় গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে জামাত এবং জুমার নামাজেও উপস্থিতি একেবারে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।

আগামী ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

এই যখন অবস্থায় তখন গত সোমবার (২০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত না হওয়ার ইঙ্গিত দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ জেলার ডিসি, চিকিৎসক ও অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার সময় এ ইঙ্গিত দেন তিনি।

আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী যখন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তখন সেখানকার পুরাতন কালেক্টরেট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানকার শোলাকিয়া ঈদগাহে তো দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত হয়। এবার তো আমরা হয়তো জামাত করতে পারবো না। এবার আমরা ঈদের নামাজও তো করতে পারব না। সেজন্য ওনার কাছ থেকে একটু শুনি।’

এর আগে ভিডিও কনফারেন্সে রমজানে তারাবীহ নামাজ ঘরে পড়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কখন কীভাবে সংক্রমিত হবে তা বলা যায় না। এ জন্য আমরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নির্দেশনা মেনে ঘরে বসে নামাজ পড়ার কথা বলছি। ঘরে নামাজ পড়লে নিশ্চয়ই আল্লাহ ডাক শুনবেন।

পড়ুন: করোনায় শঙ্কিত ইমরান খান কাঁদছেন, ভিডিও ভাইরাল (ভিডিও)

সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেই ঘরে বসে নামাজ পড়েন। এই মহামারি থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে রক্ষা পায়- সেজন্য দোয়া করেন। দেশের মানুষ যাতে বাঁচতে পারে, সেটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

প্রসঙ্গত: গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৮৪ জন।

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৬ জন। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৭ লাখ ২৩ হাজার ১৯৬ জন।

বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যায় সবার উপরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে কয়েকদিন আগেই। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) ভোর ৪টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় ২টা) দেশটিতে ৪৭ হাজার ৬৮১ জন মানুষ মারা গেছে। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮৪ হাজার ০৫০ জন।

বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালির অবস্থান।আকান্তের সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে ভয়াভহ অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৪৯ হাজার ০৯২ জন।

এটিও পড়ুন: লকডাউনে জীবন পরিবর্তন: ইসলামের ছায়ায় বিশ্ববিখ্যাত বক্সার (ভিডিও)

এছাড়া এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুবরণ করেছেন ইতালিতে ২৫ হাজার ০৮৫ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৫৪ হাজার ৫৪৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ জন।

অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা স্পেনে ২ লাখ ০৮ হাজার ৩৮৯ জন। দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ হাজার ৭১৭ জন এবং সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮৫ হাজার ৯১৫ জন।

ভাইরাসটিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর গত ৬ এপ্রিল তা ১০ হাজারে পৌঁছায়। তখন থেকে মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় সংখ্যাটি হয়ে যায় ২০ হাজার। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি ও ক্ষমতাধর দেশটিতে ৩৮ দিনে ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এতো অল্প সময়ে এতো বেশি আনুপাতিক হারে মৃত্যু হয়নি আর কোনো দেশেই। ধারণা করা হচ্ছে আগামী দু’একদিনের মধ্যে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অর্ধলক্ষ পেরিয়ে যেতে পারে।

বুধবার: আজ আরো ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯০

/এসএস

মন্তব্য করুন