

গত ১৮ এপ্রিল ভোর ৩টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক এর সহধর্মিণী ও বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহানারা হক রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ওই দিন বাদ জোহর বনানীতে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে লোক সমাগম পরিহার করতে পারিবারিকভাবে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে জানাজার আয়োজন করা হয়।
ফলে মরহুমের নিকট আত্মীয়-স্বজন এবং আইনমন্ত্রীকে সমবেদনা জানাতে আসা অল্প কিছু ব্যক্তি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। সামাজিক দূরত্বকে নিশ্চিত করার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর লাল বৃত্ত তৈরি করা হয় এবং জানাজায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিগণ ওই লাল বৃত্তে দাঁড়ান।
মরহুমা বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় কিন্তু সেখানে কোন ছামিয়ানা ছিল না।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, একটি কুচক্রী মহল সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের বা অন্য কোন জায়গার ব্যাপক জন সমাগমের জন্য আলোচিত একটি জানাজার ছবিকে আইনমন্ত্রীর মায়ের জানাজার ছবি হিসেবে ফেসবুকে প্রচার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ফেসবুকে প্রচার করা ছবিটি যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তার অন্যতম প্রমাণ হলো সেখানে গার্ড অব অনার প্রদানের স্থানে ছামিয়ানা ছিল। জানাজার স্থানে কোন লালবৃত্ত ছিলো না এবং সেখানে আইনমন্ত্রীর মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া জানাজার স্থাপনের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গেও মিল নেই।
প্রসঙ্গত : আইনমন্ত্রীর মা ও প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকের সহধর্মিণী মুক্তিযোদ্ধা জাহানারা হক শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) দিনগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি গতবছরের ২৭ অক্টোবর থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর ৫ মাস ২১ দিন।।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা আইনমন্ত্রীর মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিন বছরের ব্যবধানে মন্ত্রী তার ভাই, বোনের পর মাকে হারালেন। ২০১৭ সালের ১০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের একটি হাসপাতালে আইনমন্ত্রীর একমাত্র ছোট ভাই আরিফুল হক রনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন।
মন্ত্রীর একমাত্র বড় বোন সায়মা ইসলাম ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় মারা যান। তিনি স্বামী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। বিয়ের কিছুদিন পর ১৯৯১ সালের ২ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী নূর আমাতুল্লাহ্ রিনা হককে হারান আইনমন্ত্রী। এরপর তিনি আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। তার কোন সন্তান নেই।
২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর মারা যান বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট সহচর আনিসুল হকের বাবা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, জাতীয় সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, প্রখ্যাত আইনজীবী ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চিফ প্রসিকিউটর ছিলেন।
আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।