

পাকিস্তানের ওলামায়ে কেরামদের পরামর্শ মোতাবেক ‘বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে’ দেশটিতে মসজিদের কঠোর লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। ১৮ এপ্রিল দেশটির রাষ্ট্রপতির সাথে আলেমদের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি দৈনিক ‘ডেইলি পাকিস্তান’।
খবরে বলা হয় – পাকিস্তানের আলেমদের পক্ষ থেকে করা আসন্ন রমজানের তারাবি এবং নামাজের জন্য মসজিদ খুলে দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেছে সরকার। এবং বলেছে যে, ‘অবশ্যই নামাজ আদায়াকারীদের মধ্যে জামাতের ক্ষেত্রে দূরত্ব নিশ্চিতকরণ সহ অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাথে সাথে বলা হয়েছে, যেসব মসজিদে এসব সতর্কতা গ্রহণ করা সম্ভব নয় তেমন মসজিদে জামাত আদায় যেন না করা হয়।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভীর সভাপতিত্বে ওলামা ও মাশায়েখদের একটি আলোচনা সভা ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে করোনার ভাইরাস প্রতিরোধ সম্পর্কিত রমজানে নামাজ ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে করণীয় শীর্ষক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শর্তে বলা হয়েছে, প্রতিটি মসজিদে পরিস্কার পরিচ্ছনতার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে এবং পরিস্কার স্থান ছাড়া কোথাও যেমন রাস্তা, ফুটপাত ইত্যাদি স্থানে নামাজ আদায় করা যাবে না।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, জামাতে নামাজে দাড়ানোর সময় পারস্পরিক কমপক্ষে ছয় ফুট দূরে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হবে। প্রত্যেক মুসুল্লির জন্য নামাজে দাড়ানোর স্থান চিহ্নিত করতে হবে। সাথে সাথে প্রত্যেক মুসুল্লি মাস্ক এবং গ্লোভস পরে মসজিদে আসবে। মসজিদে একে অপরের সাথে মুসাফাহ বা মোয়ানাকা (কোলাকুলি) করবে না। সাথে সাথে প্রত্যেক মুসুল্লি নিজ নিজ ঘর থেকে অজু করে আসবে।
শর্তে আরও বলা হয়েছে- প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর মসজিদসমূহকে জীবানুনাশক যেমন ক্লোরিণ ইত্যাদি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। নামাজের স্থানসহ পুরো মসজিদে জীবানুনাশক স্প্রে করার কথাও বলা হয়েছে শর্তে। এবং মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগের বিষয়েও বলা হয়েছে। এবং সার্বিক সকল সতর্কতা অবলম্বন করে তবেই মসজিদে তারাবিহ এবং নামাজ আদায় করতে হবে। বলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি।
উল্লেখ্য : করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের চলমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে মসজিদ ও জামাতে নামাজ বিষয়ের উপর গভীর পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ দীনি শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া দারুল উলুম করাচিতে সকল মতাদর্শের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিলো গত ১৪ এপ্রিল।
দেশটির ইত্তিহাদে তানজিমাতে মাদারিসে দ্বীনিয়ার আয়োজনে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে পাকিস্তানের মসজিদসমূহ সম্পর্কে সেখানে ১৩ টি শর্ত পূরণপূর্বক সরকারের কাছে মসজিদ খুলে দেওয়ার আহবান জানানো হয়। আহবানটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন পাকিস্তানের প্রতিথযশা আলেম আল্লামা তাকী উসমানী। এই আহবানের চারদিন পরই দেশটির উচ্চপর্যায় থেকে এই ঘোষণা এলো।
আরও পড়ুন : সতর্কতা ঠিক রেখে পাকিস্তানের মসজিদ খুলে দিতে হবে : আল্লামা তাকী উসমানী
প্রসঙ্গত : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত পাকিস্তানেও চলছে ভয়াবহ করোনা সংকট। দেশটিতে করোনার ভাইরাসের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় পাকিস্তানে প্রায় ৬৪৬৩ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে আরও ৪৬৫ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪৮১ জনে দাড়িয়েছে। এবং দেশটিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ডেইলি পাকিস্তান থেকে অনুবাদ। এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস