

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে। নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ২১৯ জন। এতে দেশে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩১ জনে।
আজ বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। নিজের বাসা থেকে এতে যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনার বিস্তাররোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
আইইডিসিআর-এর তথ্য অনুসারে গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল থেকে এ সংখ্যা ধিরে ধিরে বড় আকারে বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনারোগী শনাক্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার করোনা সংক্রামন ঠেকাতে সারাদেশে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রথমে কোন এলাকায় কেউ মারা গেলে সেই এলাকা ‘লকডাউন’ করা হতো। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও কেউ আক্রান্ত হলেই সে এলাকা লকডাউন করে ফেলা হচ্ছে।
সারাদেশে সকল ধরণের ‘গণজমায়েত’ বন্ধ করা হয়েছে এবং জরুরী সেবা ছাড়া সকল পরিবহণ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমলসহ বড় বড় সকল কোম্পানীর কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। প্রধান দুই শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং পর্যটন শহর কক্সবাজারসহ বেশির এলাকাতেই প্রবেশ ও বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেকটাই ‘লকডাউন’ অবস্থায় আছে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল।
এছাড়াও দুই দফা বাড়িয়ে সরকারী বেসরকারী অফিসসমূহের ‘সাধারণ ছুটি’ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবং সন্ধ্যা ৬ টার পর যে কারো বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সারাদেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়মিত দেখাশোনা করছেন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের খোঁজখবর রাখছেন।
প্রসঙ্গত : গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস প্রথমে ধরা পরে। এরপর ধিরে ধিরে তা ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রায় ২০৫ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়তই জ্যামিতিক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
করোনাভারাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লক্ষ ৪ হাজার ৯৯১ জনে দাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৩০ জনে। যা প্রতিমূহুর্তে বেড়েই চলছে। একই সাথে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৮২ জন।
বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যায় সর্বাধিক তালিকায় প্রথম রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৬০ জন। মোট মারা গেছে ২৬ হাজার ৬৪ জন। এ থেকে সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার ৮২০ জন।
মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৬৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮ জন।
মৃত্যুর হিসেবে ইতালির পরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেনের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬০ জন।
মৃত্যুর তালিকার চার নম্বরে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৯০০ জনের বেশি। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ৬১০ জনে।
মৃত্যু তালিকায় ফ্রান্সের পরের অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ব্রিটেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৩ জন।
এর পরেই অবস্থান রয়েছে ব্রিটেনের। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২ হাজার ১০৭ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৭৩ জন। এদিকে জার্মানিতে ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও দেশটিতে মাত্র ৩ হাজার ৪৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।