

সম্প্রতি ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রবীণ ও প্রথম সারীর একজন ধর্মযাজক (রাব্বি) ‘রাব্বি চেইম ক্যানিয়েভস্কি’ দাবি করেছেন, তিনি ইহুদীদের মুক্তির দূত ‘দাজ্জাল’ এর সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন।
ইহুদী ধর্মীয় বিষয় নিয়ে প্রচারিত ইসরাইলের রেডিও-২০০০ নামের একটি রেডিও সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন ‘রাব্বি ইয়াকভ জিশোল্টজ’ নামের আর এক ধর্মযাজক। খবর ইসরাইল টুডের।
ইয়াকভ জিশোল্টজ বলেছেন, ইসরাইলের প্রধান ধর্মযাজকদের অন্যতম ‘চেইম ক্যানিয়েভস্কি’ তাকে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিনি (ইহুদীদের ধর্ম বিশ্বাসমতে) তাদের মুক্তির দূত ‘দাজ্জাল’ এর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে এসেছেন এবং সে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বিষয়টি বিশ্বের ইহুদীরা খুবই গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে কারন হলো, ‘রাব্বি চেইম ক্যানিয়েভস্কি’ ইসরাইলের অতি-ডানপন্থী ইহুদি সম্প্রদায়ের দু’জন বা তিনজন শীর্ষ ধর্মযাজকদের মধ্যে একজন হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এমনকি বিষয়টি বিশ্বের অন্যান্য ধর্মীয় লোকজনও গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। কারণ সকল ধর্মমতে দাজ্জালের আগমন হলো পৃথিবীর শেষ হওয়া বা কেয়ামত কায়েম হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।
অপরদিকে রাব্বি জিশোল্টজ দাবি করে বলেছেন যে, ক্যানিয়েভস্কি এবং গুপ্ত আরও অনেক রাব্বির অন্যরা এখন তাকে দাজ্জালের আসন্ন আগমন সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
ইসরাইলের রেডিওতে দেওয়া রাব্বি জিশোল্টজ তার বিস্ফোরক এই তিন ঘন্টার সাক্ষাতকারটি একটি সতর্কতা দিয়ে শুরু করেছিলেন এবং বলেছিলেন,
“… মুক্তির প্রক্রিয়া খুব দ্রুত এবং দ্রুত গতিতে ঘটতে শুরু করে। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজ করতে লোকেরা শান্ত ও অবিচল থাকা জরুরী”।
এবং তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রজন্মের মধ্যে একজন সম্ভাব্য মুক্তিদূত রয়েছেন এবং ধার্মিক ব্যক্তিরা যারা আছে যারা জানেন যে তিনি কে। এই প্রজন্মের ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘দাজ্জালের’ বিষয়টিই সত্য। এবং তিনিই আমাদের মুক্তির দূত।”
জিশোল্টাজ ‘দাজ্জালের’ আগমনের আরও কিছু প্রমান পেশ করে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আপনারা জানেন ইহুদী ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মযাজক “রাব্বি ডোভ কুক” আরো দশ বছর আগেই এ বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। দশ বছর আগে ইস্রায়েল যখন এক ভয়াবহ খরার কারণে ভুগছিলো তখন কেউ একজন যাজক কুককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইসরাইলের অন্যতম বৃহৎ হৃদ ‘গ্যালিলি সমুদ্র’ কখন পূর্ণ হবে? “যাজক কুক” তখন প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন যে, দাজ্জাল উপস্থিত হলে গ্যালিলি সমূদ্র পূর্ণ হয়ে যাবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাব্বি কুকের এই বক্তব্য অনুসারে গ্যালিলি সমুদ্র প্রথমবার পূর্ণ হবে। যা ইতিপূর্বে কখনও হয়নি”।
এছাড়াও তিনি ইহুদী কয়েকজন যাজকের আরও কিছু ভবিষ্যৎবাণীর বিষয় উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান ইসরাইলে সরকার গঠনে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে সে সম্পর্কেও আগে ধর্মযাজকরা পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ‘যাজক কুক’ আগেই বলেছিলেন, বর্তমান নির্বাচনে কোন সরকার গঠন হবে না বরং এটি অর্থহীন নির্বাচন হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেও তাদের বিশ্বাস যে ইসরাইলে কোন অর্থবহ সরকার হয়নি। যা দাজ্জাল আগমনের ইঙ্গিত।
কয়েক দশক আগে, ইসরাইলের অন্যতম যাজক ‘যিটজাক কাদুরী, ‘যাজক মেনাচেম স্কেনেরসন’, দুজনেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হবে ইসরাইলের শেষ প্রধানমন্ত্রী এবং এর পরেই আগমন হবে দাজ্জালের।
তবে এসবই ইহুদী ধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাস। তারা তাদের ধর্মমত এবং ইহুদি ধর্মযাজকদের বর্ণনা অনুসারে এসব বিষয়ে মতামত দিয়েছেন।
কিন্তু দাজ্জাল আগমনের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মে রয়েছে বিস্তর বর্ণনা। তাছাড়া দাজ্জাল কখন আসবে, পৃথিবীতে তার আগমনের পূর্ববর্তী অবস্থা কি হবে সে বিষয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন ও হাদীসের মধ্যে পরিষ্কারভাবে বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট আলেম শায়খ আহমদ উল্লাহ তাঁর একটি ভিডিও বিশ্লেষণে বলেন, দাজ্জাল আগমনের ক্ষেত্রে ইহুদি ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে যে বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। দাজ্জালের আগমন পৃথিবীতে হয়নি এবং কিছু স্পষ্ট আলামত ব্যতীত দাজ্জালের আগমন পৃথিবীতে হবেও না।
বিশেষ করে ইমাম মাহদীর আগমন এবং কেয়ামত কায়েম হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু আলামত প্রকাশ না হওয়া ছাড়া দাজ্জালের আগমনের বিষয়টি বলা ইসলাম ধর্মমতে সঠিক হবে না। তাই দাজ্জালের আগমন বিষয়ে ইহুদিদের এই ধর্মীয় বর্ণনা মুসলিম ধর্মমত অনুসারে বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং তা মানা যাবে না।
[ইসরাইল টুডে অবলম্বনে তানভির শাফায়াত]
এ বিষয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহর বিস্তারিত বক্তব্য শুনতে পারেন নিম্নের ভিডিও থেকে