রুজু সংক্রান্ত খবর গুজব: মর্মাহত আল্লামা তাকী উসমানী

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২০

করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ইমাম মুয়াজ্জিনসহ মুসল্লি নির্ধারণ করে দিয়ে বিশেষ ঘোষণা জারি করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেশের ১৫ জন শীর্ষ পর্যায়ের আলেম মসজিদ খুলে দেওয়ার বিবৃতি প্রদান করেন এবং হাটহাজারী মাদরাসার প্রধান মুফতী আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী নামাজ সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত ফতোয়া প্রদান করেন।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। পাকিস্তানের একটি উর্দূ নিউজ পোর্টালের উদ্ধৃতিতে খবর ছড়ায় যে মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামীর ফতোয়া পেয়ে পাকিস্তানের মুফতী আল্লামা তাকী উসমানী তার পূর্বের দেওয়া ফতোয়া থেকে রুজু করেছেন।

এ ব্যাপারে পাবলিক ভয়েসকে মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ জানান, আল্লামা তাকী উসমানীর সাথে তিনি কথা বলেছেন। পাবলিক ভয়েসকে তিনি বিষয়টির বিস্তারিত জানিয়েছেন।

আল্লামা তাকী উসমানীর উদ্ধৃতি দিয়ে মুফতী মিজান জানান, তাকী উসমানী সাহেব কোনো ফতোয়া থেকে রুজু করেননি। এবং আব্দুস সালামা চাটগামীর ফতোয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। খবরে যে বিষয়ে রুজু করার কথা বলা হয়েছে আল্লামা তাকী উসমানী তেমন কিছু বলেননি। তিনি এ সংক্রান্ত বিষয়ে এখন পর্যন্ত মৌখিকভাবে যা বলেছেন এবং লিখিত ফতোয়া দিয়েছেন তার ওপরে তিনি অটল আছেন।

এ বিষয়ে আল্লামা মুফতী তাকী উসমানীর সাথে আল্লামা মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ এর কথোপকথোনের অডিও ক্লিপ পাবলিক ভয়েসের সংরক্ষণে রয়েছে। নিম্নে দুজনের কথোপকথোনের বাংলা অনুবাদ উল্লেখ করা হলো। হোয়াটসঅ্যাপ অডিও বক্তব্য থেকে হুবহু অনুবাদ করেছেন পাবলিক ভয়েসের নির্বাহী সম্পাদক হাছিব আর রহমান।

‘মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ পাকিস্তানের বিদগ্ধ আলেম মুফতী তাকী উসমানীর কাছে প্রশ্ন করে বলেন, ‘উম্মত নামের একটি উর্দু নিউজ পোর্টাল থেকে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে, আপনি বাংলাদেশের মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামীর ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে জুমা এবং জামাতে নামাজ ইত্যাদি বিষয়ে আপনার পূর্বের ফতোয়া থেকে রুজু করেছেন বা ফিরে এসেছেন, যা নিয়ে বাংলাদেশেও বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি কতটুকু সঠিক বা এর বাস্তবতা কী জানালে কৃতজ্ঞ হবো’।

মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ-এর প্রশ্নের জবাবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলারদের অন্যতম আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী বলেন,

‘হযরত আপনি উল্লেখিত পত্রিকার যেই বিষয়টা পাঠিয়েছেন এবং আমি ফতোয়া থেকে রুজু করেছি বা ফিরে এসেছি বলে সেখানে যা বলা হয়েছে তা মোটেও সঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পত্রিকাগুলোতে এ ধরনের অনেক কিছুই প্রকাশ করা হয় যা খুবই দুঃখজনক বিষয় এবং তারা এ বিষয়গুলো যাচাই না করেই প্রকাশ করে দেয়’।

মুফতী তাকী উসমানী হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেন, ‘উল্লেখিত বিষয়ে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো, আমি কোনো ফতোয়া থেকে রুজু করিনি এবং এ বিষয়ে মুফতী আব্দুস সালামের কোনো ফতোয়াকে ‘‘তাইদ’’ করিনি। বরং এ বিষয়ে মুফতী আব্দুল কুদ্দুস তিরমিযীর সঙ্গে আমার যে আলোচনা হয়েছে তা হলো, সাধারণত যারা মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে পারবে না- তারা কি ঘরে জোহর পড়বে নাকি জুমা পড়বে। আমি তখন উনাকেও এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমাদের অনুসন্ধান অনুসারে মতামত হলো, তিনি জোহর আদায় করবেন জুমা নয়’।

এ বিষয়ে মুফতী তাকী উসমানী আরো করে বলেন, ‘ঘরে জোহরের নামাজ পড়তে হবে জুমার নামাজ পড়া যাবে না, কারণ হলো, দারুল ইসলাম এর মধ্যে ঘরে বসে জুমার নামাজ আদায় করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয় এবং এখনও আমরা এই সিদ্ধান্তের ওপরেই আছি। তবে জুমার নামাজ ইস্যুতে সরকারি যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল তা না মানার কারণে আমাদের দেশে অনেক মসজিদে মুসল্লীদের ওপর এবং ইমাম সাহেবদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে যা মোটেও সঠিক কাজ নয়’।

এ বিষয়ে আমরা দারুল উলীম করাচিতে বসবো এবং আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু ‘’মসজিদে জুমার নামাজ এবং ঘরে জোহর নামাজ পড়া’’ এই ফতোয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো পরিবর্তিত বক্তব্য নেই এবং আমরা কারো ফতোয়ার ওপর ভিত্তি করে রুজু (ফিরে আসা) করিনি।

বিশেষ করে মুফতী আব্দুস সালাম চাটগামীর ফতোয়ার কারণে বা তার সাথে আলোচনার মাধ্যমে আমরা কোনো ফতোয়া থেকে রুজু করিনি। অতএব, আমি অনুরোধ করব এ ধরনের বিষয়গুলো যাচাই না করে প্রচার না করার জন্য। শোকরিয়া। জাযাকাল্লাহ’।

[উল্লিখিত বিষয়ে মুফতী তাকী উসমানীর হুবহু বক্তব্য অনুবাদ করা হয়েছে]

প্রসঙ্গত : করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটকালীন মূহুর্তে পৃথিবীর সবর্ত্রই চলছে সামাজিক দূরত্ব রেখে নিজেকে আলাদা রাখা। পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম দেশগুলোর মসজিদগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখতে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি মসজিদুল হারাইমন শরীফাইনসহ সৌদি আরবের সকল মসজিদেও এই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

জামাত সীমিত করা মসজিদ ধ্বংসের নামান্তর: প্রধান মুফতী হাটহাজারী

এসএস/পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন