

করোনাভাইরাস চীন থেকে শুরু হলেও ইতালি ফ্রান্স ঘুরে এখন যেন তাঁর ঠিকানা নিয়েছে বিশ্ব পরাশক্তি দাবিদার আমেরিকাতে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সব রেকর্ড ভেঙ্গে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ২ লাখেরও বেশিতে।
অপরদিকে মৃত্যুসংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। বিশ্বে সর্বপ্রথম কোন দেশে আমেরিকাতেই একদিনে করোনাভাইরাসে মৃত্যুসংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে ১২০০ জনেরও বেশিতে। এবং প্রতি মূহুর্তেই বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যা। ইতোমধ্যে আমেরিকায় মৃত্যুসংখ্যা দাড়িয়েছে ৪,৬০০ জনে।
গতকাল বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এসব তথ্য দিয়েছে এবং কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে শীঘ্রই করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা মূল শহরগুলো ছাড়িয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো বুধবারের ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন যে, তাঁর রাজ্যে মোট করোনভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৮৩,০০০ এরও বেশি এবং মৃত্যুর মধ্যে ১,৯১১ জন রয়েছেন। নিউইয়র্কের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা নিউ জার্সি। যেখানে এ পর্যন্ত ১৮,০০০ এর বেশি আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৬৭ জন মারা গিয়েছেন।
বর্তমানে আমেরিকায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে ১২ হাজার ২২৬ জন লোক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে এটি ১,২৯৭ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে, যাদের মধ্যে ৩,০০০ এরও বেশি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
কুওমো জোর দিয়েছিলেন যে, ৬,০০০ এরও বেশি রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে এবং রাজ্যের হাসপাতাল থেকে সুস্থ অবস্থায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে যে, করোনাভাইরাসের উৎস চীন সে দেশে প্রাদুর্ভাবের পরিমাণকে কমিয়ে দিয়েছে।
ব্লুমবার্গ নিউজ হোয়াইট হাউস সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে করোন ভাইরাসের কারণে চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা তারা প্রকাশ করেনি। ব্লুমবার্গ নিউজ আরও জানিয়েছে, চীনা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মার্কিনীদের দাবির কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে এক ধরণের ভয়াবহ পরিস্থিতি কাজ করছে। জরুরী সাস্থ্যসেবা কমে যাচ্ছে। দমকল বিভাগ জানিয়েছে, শহরের অ্যাম্বুলেন্স সিস্টেম এবং পুলিশ বিভাগ করোনার ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে, নগরীর জরুরি চিকিতসা কর্মীদের প্রায় এক চতুর্থাংশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রায় ১৬ শতাংশ এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার দাবিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় ২৫ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে এমনটা বলা হলেও মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস অনুমান করেছে যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা বজায় রাখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার এর মধ্যে থাকতে পারে।
নিউইয়র্কের মেয়র কুওমো বলেছিলেন যে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থনীতিকে থামিয়ে দিয়েছে এবং বেশিরভাগ আমেরিকানকে ঘরে বসিয়ে দিয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি “খারাপ গ্রাউন্ডহোম মুভি” এর সাথে তুলনা করেছেন।
প্রসঙ্গত : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলিত তথ্য অনুযায়ী, গতবছরের ডিসেম্বরে চীনে হুবেই প্রবেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস সংক্রামনের পর ভাইরাসটি কমপক্ষে ১৮০ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুসারে, করোনাভাইস সংক্রামন থেকে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪৭,১৯২ জন। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৯,৩৫,১৮৯ জন। তবে আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১,৯৩,২৮৯ জন। যার মধ্যে আইইডিসিআরের দাবি অনুসারে বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ মৃত্যুর সংখ্যা ৬ এবং সুস্থ হয়ে ফেরার সংখ্যা ২৬ জন।
আল জাজিরা থেকে হাছিব আর রহমানের অনুবাদ