দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে কঠিন সংকটে দেশ: ইতালির প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাস

প্রকাশিত: ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০২০
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে, ছবি: ইউরোপার্ল ইউরোপা ইও

শাহনূর শাহীন, পাবলিক ভয়েস: মহামারী করোনাভাইরাসে ব্যাপাক প্রাণহানি ও প্রাদুর্ভাবের ঘটনাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে কঠিন সংকট বলে অভিহিত করেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে। শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে কঠিন এ মন্তব্য করেন জিউসেপ্পে।

ভাষণে ইতালির প্রধানমন্ত্রী ‘জিউসেপ্পে কন্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেশের সবচেয়ে কঠিন সংকট হিসাবে অভিহিত করে দেশটিতে আরো কঠোর বিধিনিষেধের কথা জানান।

অনেক বড় অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকারের কথা উল্লেখ্য করে জিউসেপ্পে বলেন, কারখানাগুলি সমস্ত উত্পাদন যা একেবারে অপরিহার্য নয় তা বন্ধ রাখবে। এটা কেবল ভাইরাস প্রতিরোধ এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য।

  • জনগণকে আশ্বস্ত করার প্রয়াসে তিনি বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্র এখানে রয়েছে, আপনারা রাষ্ট্রকে সহযোগিত করুন’।

ইতালি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সান্দ্রা জামপা বলেছেন, ‘প্রতিদিন আপনি কিছুটা বন্ধ করেন, আপনি কিছুটা স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করেন। কারণ ভাইরাসটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেয় না’।

এদিকে প্রতিদিন মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে ইতালি। এটা এমন এক রেকর্ড যা আনন্দের পরিবর্তে বুকফাটা আর্তনাদের জন্ম দেয়। রেকর্ড ভঙ্গের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘন্টা অর্থাত গতকাল শনিবার (১৭ মার্চ) দেশটিতে ১৮ চিকিৎসকসহ ৭৯৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

সব মিলিয়ে ইতালিতে এখন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ৩৩,০০০ এরও বেশি এবং ৪,৮০০ জনেরও বেশি মারা গেছে মহামারী এ ভাইরাসে। গত সপ্তাহ থেকে প্রতিনিয়ত অর্ধেকেরও বেশি আক্রান্ত ও প্রাণহানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার হার বাড়ছে। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস।

ইতালি: ১৮ চিকিৎসকসহ ৭৯৩ জনের মৃত্যু একদিনেই

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ৭৯৩ জন অতিরিক্ত মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড। আর সব মিলিয়ে ইতালি সবচেয়ে বেশি মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে এবং স্থানান্তরিত মহামারীর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় দেশটির গীর্জাগুলিতে মরদেহ’র স্তূপ জমে গেছে। এদিকে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত উত্তর অঞ্চল লম্বার্ডিতে শুক্রবার লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকার সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে।

এদিকে নিউইয়র্ক টাইমমে এর প্রতিবেদনে ইতালিতে ব্যাপকহারে প্রাণহানি এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য সরকারের সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিনগুলিতে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কন্টে ও দেশের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা এই হুমকিটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারা তাদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিলেন এবং জনগণকে সুরক্ষার একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও ইতালিয় কর্তৃপক্ষ সংক্রমণের প্রথম দিকে এই সমস্ত পদক্ষেপকে নষ্ট করেছিল। তখন তারা বেসামরিক নাগরিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনীতি সংরক্ষণের চেষ্টা করেছিল। অতচ তখনই সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো জরুরি ছিলো।

প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি অসুস্থতা নিয়ে লম্বার্ডির লোদি প্রদেশের কোডোগনোর একটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন। লোকটি হাসপাতালে ভর্তি হতে অস্বীকার করে বাড়িতে চলে যান।

কিন্তু তিনি বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েক ঘন্টা পরে হাসপাতালে ফিরে আসেন এবং একটি সাধারণ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ২০ শে ফেব্রুয়ারি তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আইসিইউতে তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

পরে ওই লোকটি ‘রোগী ওয়ান’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি পুরো এক মাস ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিলেন। এই এক মাসে কমপক্ষে তিনটি নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও ফুটবল খেলা এবং একটি দৌঁড় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। স্পষ্টতই এই লোক অসংখ্যজনকে ভাইরাস ছড়িয়েছেন এটা ধারণা করা হয়।

এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সতর্কতার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ইতালি সরকার প্রথম লম্বার্ডি অঞ্চলের ১১টি শহরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই স্থানীয় স্কুল, যাদুঘর এবং সিনেমা থিয়েটারগুলি বন্ধ করা হয়। তবে মিলানিজ সুপারমার্কেটগুলি তখনো চালু ছিলো।

পরেরদিন প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে জাতির উদ্দেশ্য এক ভাষণ দেন। ভাষণে স্বাস্থ্য সহায়তা দ্বিগুণ করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু ততক্ষণে আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায় এবং ৭জনের মৃত্যু হয়। ধ্বস নামে শেয়ার বাজারে।

তবে ইতালির ট্র্যাজেডি এখন তার ইউরোপীয় প্রতিবেশী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সতর্কতা হিসাবে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ভাইরাসটি সমান বেগে এগোচ্ছে। যদি ইতালির অভিজ্ঞতাটি কিছু দেখায় তবে তা হলো ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলি বিচ্ছিন্ন করার জন্য এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চলাচল সীমাবদ্ধ করার ব্যবস্থাগুলি খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা উচিত।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে শাহনূর শাহীন

/এসএস

মন্তব্য করুন