স্বামীকে খুন করে রক্তমাখা ছুরি হাতে সোজা থানায় হাজির স্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২০

বৃহস্পতিবার রাতে কোলকাতার বনগাঁ থানার নেহরু নগরে স্বামীকে খুনের করে রক্তমাখা ছুরি নিয়ে স্ত্রী  হাজির হন থানায়। স্বামীকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে হাতের শিরা কাটে স্ত্রী। এরপর থানায় গিয়ে সে আত্মসমর্পণ করে। সবটা শোনার পর পুলিশ নেহরু নগরে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। স্বামীকে খুনের অভিযোগে পুলিস স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে।

মৃতের নাম শঙ্কর দে (৩৭)। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রি ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নেহরু নগরের বাসিন্দা শঙ্করের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আড়াই বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন শান্তি দে’কে। শান্তিরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। তার সাত বছরের এক সন্তান রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পরে থেকেই দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে শঙ্করের পারিবারিক অশান্তি বাধত। মাঝমধ্যেই মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাত। এনিয়েই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ছিল প্রতিদিনের অশান্তি। স্বামীর অত্যাচারে তিতিবিরক্ত ছিল শান্তি।

সূত্রে জানা যায়, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এক বছর আগে স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিল সে। সম্প্রতি সে স্বামীর কাছে ফিরে এসেছিল। কিন্তু দাম্পত্য কলহ থামেনি। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধায় মদ্যপ অবস্থাতেই বাড়িতে এসেছিলেন শঙ্কর। ঘরে ফিরতেই দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাঁধে। ঝগড়া  পর ঘুমিয়ে পড়েন শঙ্কর। এই সুযোগ নিজের পরনের ওড়না দিয়ে শান্তি স্বামীর গলায় ফাঁস লাগায়। শ্বাসরোধ করে খুনের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে স্বামীর দুই হাতের শিরা কেটে দেয়। এর পর রক্তমাখা ছুরি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোড়ের মাথা থেকে একটি টোটো ভাড়া করে সোজা বনগাঁ থানায় পৌঁছয় শান্তি। স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করে সে থানায়।

মৃতের আত্মীয় তপন অধিকারী বলেন, প্রায়দিন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হতো। অন্যান্য দিন বাড়ি গিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে আসতাম। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সন্ধায় চিৎকার চেঁচামেচি শুনেও যাইনি। ভেবেছিলাম, প্রতি দিনকার ঘটনা। মিটে যাবে। রাতে যখন পুলিশ এল, দরজা খোলার পর দেখলাম, দাদা খাটের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতিবেশী সুখেন্দু বিশ্বাস বলেন, কেউ কারও কথা শুনত না। শঙ্কর প্রায় দিন মদ খেয়ে বাড়ি ফিরত। তা নিয়েই মূলত অশান্তি। এলাকার প্রতিবেশীরা সকলেই বোঝানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু অঘটন থামানো গেল না। আরেক প্রতিবেশী ঝুমা দে বলেন, সন্ধার পর গোলমাল শুনতে পেয়েছিলাম। কিছু পরেই জানতে পারি, রক্তাক্ত ছুরি হাতে বউমা একা থানায় চলে গিয়েছে। ওদের পারিবারিক অশান্তি ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে ঝামেলা ছিল না।

বনগাঁ থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে আরও জেরা করা হবে।

এমএম/পাবলিকভয়েস

মন্তব্য করুন