উদ্বোধনের পর আজকেই চলাচলের জন্য উন্মুক্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে

যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা

প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০২০
ইনসেটে উদ্বোধন ঘোষণার সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী

পাবলিক ভয়েস ডেস্ক: বহুল প্রতিক্ষিত যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। এদিন ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম- পরিচ্ছন্ন শহর’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, সড়ক-সেতু বিভাগের সচিব ও অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু), সেতু এপ্রোচ সড়ক এবং ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এদিকে উদ্বোধনের পর আজকে থেকেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে দেশের প্রথম এবং বৃহত এ এক্সপ্রেসওয়ে। এই প্রকল্প উদ্বোধনের মাধ্যমে অভ্যন্তরিণ যোগাযোগ ব্যাবস্থায় বাংলাদেশ নতুন এক যুগে প্রবেশ করলো।

আজ সকালেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।।

ভ্রমণ সময় কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

এক্সপ্রেসওয়েতে বর্তমানে ঢাকার জুরাইন থেকে মাওয়া পর্যন্ত মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগবে। অন্যদিকে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সময় লাগবে ২০ মিনিটেরও কম। আর পদ্মাসেতু হয়ে গেলে সেতু পার হতে সর্বোচ্চ ৫ মিনিটসহ মাত্র ৫৫ মিনিটেই ঢাকা থেকে ভাঙা পৌঁছা যাবে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের এ এক্সপ্রেসওয়ে দুটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়ে নিশ্চিতভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ। ৮ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও-এর তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। ব্যায় হচ্ছে মোট ১১ হাজার ৩কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সুফল ভোগ করা যাবে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তফা জানান, রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই মাসে।

২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার অংশের কাজ। চলতি মাসে এসে প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১১ হাজার ৩কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ হয়। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। সেতুর দুই পাশে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য সাড়ে ৫ মিটার প্রশস্ত সড়ক রাখা রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের বিবরণে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে ৫টি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, এটিতে মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দুটি এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে।

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ৬ জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার মানুষ সরাসরি এ আন্তর্জাতিকমানের এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।

আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানোর পর ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।

২০২১ সালের জুনের মধ্যে ট্রাফিকের জন্য ব্রিজটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে, ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙা যাওয়া যাবে। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় মাত্র ১ ঘণ্টা সময়ও লাগবে না তখন।

জানা যায়, এ হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩ দশমিক ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং নির্ধারিত সময়সীমার ৩ মাস আগে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।

১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে এক্সপ্রেসওয়ে ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে।

স্থানীয় ও ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে দুটি পরিষেবা লেন রাখা হয়েছে যাতে দ্রুত যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় হ্রাস করতে পারে।

এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হল- আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।

৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী, ১৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী, ২৪৬৬ মিটার আড়িয়ালখাঁ এবং ১৩৬ মিটার কুমার সেতু।

সব ছোট বড় সব মিলিয়ে সেতুর সংখ্যা হচ্ছে ২৯টি। এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোল প্লাজা রাখা হয়েছে।

দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মোট ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই এক্সপ্রেসওয়েতে আছে কালভার্ট, আন্ডারপাস, ৪টি বড় সেতু, ২৫ টি ছোট সেতু, ৫টি ফ্লাইওভার, ২টি ইন্টার চেন, ৪টি রেলওয়ে ওভার পাস। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক। আমার মনে হয় এটি ইউরোপের অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ককেও হার মানাবে।

এমনটাই মনে করেন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত ব্রিটিশ বাংলাদেশি নাগরিক আরিফ চৌধুরী। এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এটা চমৎকার, আমি অভিভূত। আমার কাছে মনে হয় আমি যুক্তরাজ্যের কোথাও আছি, এ এক্সপ্রেসওয়ের মান এবং সৌন্দর্য দেখে আমি গর্ব অনুভব করছি।

/শাহনূর শাহীন/পাবলিকভয়েস/

মন্তব্য করুন