বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা থেকে পিছিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে ইউজিসি

প্রকাশিত: ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

কেন্দ্রীয় বা সমন্বিত নয়, গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা (ক্যাট) ব্যবস্থায় বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় সাড়া না দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি’র কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেঠকে জানানো হয়, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত রোডম্যাপ তৈরি করা হবে।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আলাদা পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ পর্যায়েও ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেক পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি নানা ভোগান্তি ও হয়রানি পোহাতে হয়।

শিক্ষার্থীদের কষ্ট থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয়ভাবে এক বা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও একাধিকবার এ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

কিন্তু বুয়েট, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গুচ্ছবদ্ধ করা হবে। সে অনুযায়ী সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হবে একটি গুচ্ছে।

সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এবং সব সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা হবে আলাদা। আবার সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজের বিভাগ থাকায় এ ক্ষেত্রে তিনটি পরীক্ষা আয়োজনের চিন্তাও চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে সে সিদ্ধান্ত নিতেই আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ফের বৈঠকে বসবেন ভিসিরা।

বর্তমানে সাতটি কৃষি বিভাগ প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়, এগারোটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নয়টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও আছে তিনটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো কোন গ্র“পে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সব কৃষি এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুটি পরীক্ষা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ও সব সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও তিনটি পরীক্ষার কথা এসেছে। তবে এ নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা আছে। কেননা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় আছে। আবার কোনো কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও কলা অনুষদভুক্ত বিভাগ আছে। তাই পরীক্ষাগুলো কীভাবে সমন্বয় করা হবে তা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোট ছয়টি গুচ্ছ পরীক্ষার বিষয় আলোচনা হয়েছে।

একটি সূত্র বলেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব বিভাগ আছে সেগুলোর সঙ্গে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের মিল আছে। সেই হিসাব করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা একটি গুচ্ছে হতে পারে। গুচ্ছের নেতৃত্বে থাকবে সংশ্লিষ্ট গুচ্ছের বড় বিশ্ববিদ্যালয়। বাকিরা সদস্য হবে।

কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষার রোডম্যাপ তৈরির লক্ষ্যে বুধবার বিকালে ইউজিসিতে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হয়। আগেভাগেই ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় এই পদ্ধতির বিকল্প অনুসন্ধানের প্রস্তাব আসে বৈঠকে। এরপরই গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার ক্ষেত্রে পরীক্ষা গ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এই ব্যবস্থায় না থাকে তাহলে ৭০-৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর রাজধানীতে পরীক্ষা নেয়ার কেন্দ্র থাকে না। অনুরূপভাবে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে একই সমস্যা। এমন নানাদিক পর্যালোচনা করে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার পক্ষেই ভিসিরা মত দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভিসিদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ পদ্ধতিতে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেবে। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তারা এ পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানালেও তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে যুক্ত হতে পারছে বলে জানিয়েছেন। তবে আমাদের চেষ্টা ও দরজা খোলা থাকবে। যারা এতে যুক্ত হতে চাইবে তাদের নেয়া হবে।

তিনি বলেন, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লজিস্টিক সহযোগিতা ছাড়া কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া অসম্ভব। ফলে নতুন করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি জানান, মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বে বিভিন্ন টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হবে। টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। এ কমিটি ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে কাজ করবে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রত্যাশা সবাই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তাদের স্বাগত জানানো হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইউজিসি’র সদস্য মো. আলমগীর বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। তারা উপকমিটি তৈরি করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ন, ফলাফল প্রকাশসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, অনলাইনে আবেদন নেয়া হবে। আবেদনকারীদের রোল নম্বর অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করে সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল পাঠিয়ে দেয়া হবে। সবকিছু কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপকমিটির সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আওতায় কলেজগুলোতেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ বিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী চাইলে মানবিকের কোনো বিষয়েও ভর্তির সুযোগ পাবে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে এ ধরনের কোনো একটি ব্যবস্থা রাখা হবে।

ইউজিসি পরিচালক (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) মো. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর মধ্যে ৪০টিতে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে। বড় ৫টি বাদ গেলে এখন ৩৫টি নিয়ে হবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা।

বৈঠকে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ২টি বিশ্বদ্যিালয়ের উপাচার্য মনোনীত প্রতিনিধি এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম এবং প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

/এসএস

মন্তব্য করুন