পাকিস্তানে ‘ভালোবাসা দিবস’ পালিত হবে ‘বোন দিবস’ হিসেবে

প্রকাশিত: ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০

ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখকে ‘ভালোবাসা দিবস’ পালনের এই নিয়মকে পাল্টাতে চাচ্ছে পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের ইউনির্ভার্সিটি অব এগ্রিকালচার। ইসলামী ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে ভালোবাসা দিবসকে ‘সিস্টারস ডে বা বোন দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য জাফর ইকবাল ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সিস্টারস ডে’ ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা যায়, কিছুদিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভালেন্টাইন’স ডের পরিবর্তে ‘বোন দিবস’ হিসেবে পালনের নির্দেশনা জারি করেন ফয়সালাবাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তরুণদের মধ্যে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং ইসলামি ঐতিহ্যে ছড়িয়ে দিতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শুধু নির্দেশনা দিয়েই থেমে থাকেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কার্ফ, শাল এবং বোরখাও বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য জাফার ইকবাল রান্ধাওয়া বলেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে নারীরা অনেক বেশি স্বনির্ভর। তাদেরকে বোন, মা, কন্যা এবং স্ত্রী রূপে মর্যাদা দেওয়া হয়। পশ্চিমা আগ্রাসনে আমরা নিজেদের সংস্কৃতিকে ভুলে গেছি। নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার মধ্য দিয়েই বিশ্বে পরিচিতি এবং মর্যাদা লাভ সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “তরুণদের উচিত নিজেদের শক্তিকে জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করা।” এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছেন, আমাদের সংস্কৃতিতে নারীরা মা-বোন, কন্যা ও পত্নী রূপে সম্মান পান বেশি। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

প্রতিবছর ভালোবাসা দিবস পালন নিয়ে পাকিস্তানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। কেউ এটা স্বচ্ছন্দে পালন করেন, আবার কেউ বিরোধীতা করেন। পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলো ও বিভিন্ন রেস্তোরাঁ-বেকারিতে ভালোবাসা দিবসে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে বিরোধীরা দেশব্যাপী ‘ভালোবাসা দিবসকে না বলুন’-এর প্রচারনা চালায়।

২০১৭ সালে দেশটির হাইকোর্ট জনসম্মুখে এবং সরকারি দফতরগুলোতে ভালোবাসা দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। গত বছর আরও একধাপ এগিয়ে ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে সংক্রান্ত সংবাদ বা তথ্য সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সিস্টারস ডে পালনের সময় ক্যাম্পাসের নারী শিক্ষার্থীদের স্কার্ফ ও আবায়াহ (বোরকার মতো এক ধরনের পোশাক) উপহার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের ইউনির্ভার্সিটি অব এগ্রিকালচার উপাচার্য জাফর ইকবাল বলেন, ভালোবাসা দিবসকে সিস্টারস ডে হিসেবে পালন করাটা হবে পাকিস্তান ও ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

“নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার মধ্য দিয়েই বিশ্বে পরিচিতি এবং মর্যাদা লাভ সম্ভব।”

আর মাত্র কদিন পরেই পালিত হবে পালিত হবে ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। রোমান ধর্মযাজক ভ্যালেইটাইন’সের প্রচলিত ইতিহাসকে স্মরণ করে এদিন প্রিয়জনকে ফুল, কার্ড উপহার দিয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করবে মানুষেরা।

দিবসটি প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই এই বিতর্কিত দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন