হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া সেই পরিবারকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে

প্রকাশিত: ২:৪২ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২০

রামগঞ্জে হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়া সকল নাগরিককে ভারতে পুশব্যাক করিয়েছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। সোমবার যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়।

এর আগে তাদের কাছ থেকে ১২টি ভারতীয় পাসপোর্ট ও ১২টি বাংলাদেশী জন্মনিবন্ধন কার্ড উদ্ধার করা হয়। যার একটি রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ও বাকী ১১টি কেরানীগঞ্জ উপজেলার। ভারতীয় পাসপোর্ট অনুযায়ী ভারতের নাগরিক হওয়ায় তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে (২৪ জানুয়ারী) জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন হাজিপুর পাটোয়ারী বাড়ীর তাফসিরুল কোরআর মাহফিলে আদালতের হলপনামা অনুযায়ী শংকর অধিকারী ওরফে মনির হোসেন ও তার পরিবারের ১১সদস্যকে বিশিষ্ট ওয়াজ মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আযহারীর উপস্থিতিতে শাহাদা পাঠ করিয়ে মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়।

কিন্তু অভিযোগ ওঠে তারা এর আগেই মুসলমান হয়েছিলো। কেরাণিগঞ্জ থেকে মুসলিম নামে জন্ম নিবন্ধনভুক্তিতে এই বিতর্ক বাঁধে। পরে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে রামগঞ্জ থানা পুলিশ তাদেরকে হেফাজতে নেয়।

থানা সূত্রে জানা যায়, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফাতেমা মেম্বারের ছেলে মনির হোসেন (শংকর অধিকারী) বর্তমান বয়স ৪৭। যখন তার বয়স ১২ বছর, তখন বাবা মায়ের সাথে রাগ করে চলে যায় বাড়ী ছেড়ে ঢাকায়। সেখান থেকে সীমান্ত পার হয়ে চলে যান ভারতে। মাধূরী পালৈর নামের একজন হিন্দু ভদ্র মহিলা মনির হোসেনকে রাস্তায় পেয়ে নিয়ে যান নিজ বাড়ী মেদেনীপুর। হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেন মনির হোসেন। সে দেশের জাতীয়তা, রেশনকার্ডসহ হয়ে যান ভারতীয় নাগরিক। বিয়ে করেন মাধূরী পালৈর মেয়ে রেখা অধিকারীকে। সেখানে জন্ম নেয় ৫ মেয়ের।

ছেলে সন্তানের আশায় রেখা অধিকারীর জেঠাতো বোন সুজাতা অধিকারিকে করেন ২য় বিয়ে। সে পরিবারে জন্ম নেয় ১ ছেলে ২ মেয়ে। জন্মসূত্রে সবাই ভারতীয় নাগরিক ও হিন্দু ধর্মালম্বী। দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে প্রায় ৩৫ বছর পর ২০১৯ইং সনের ১৪ আগষ্টের শেষ সপ্তাহে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। দুই মাসের ভিসা নিয়ে। এসেই মা ফাতেমা আক্তার ও ভাইসহ আত্মীয়স্বজনের তোপের মুখে পড়েন শংকর অধিকার ও তার পরিবার।

মা ফাতেমা আক্তারসহ নিকটাত্মীয়রা তাদের পুরো পরিবারকে মুসলমান হয়ে সংসার ফিরতে বলেন। বাধ্য হয়ে পাশ্ববর্তি চন্ডিপুর ইউনিয়নের চাঙ্গিরগাঁও জনৈক আয়াত উল্যাহর বাসা ভাড়া নিয়ে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন শংকর ও তার পরিবারের লোকজন। বাংলাদেশে আসার পর শংকর অধিকারী (মনির হোসেন) স্বপরিবারে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করতে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে সহযোগীতা করেন।

সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারী ২০২০ইং শুক্রবার রাতে মাওলানা আমির হামজা ৪জনকে ও মিজানুর রহমান আযহারীর উপস্থিতিতে শংকর অধিকারী ও তার পরিবারের ১১ সদস্যকে শাহাদা পাঠ করিয়ে মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করা বিষয়টি পুরো রামগঞ্জে তোলপাড় শুরু হলে রামগঞ্জ থানা পুলিশ উক্ত পরিবারের ১১ সদস্যকে নিয়ে আসে থানা হেফাজতে।

মনির হোসেন ওরফে শংকর অধিকারীর মা ইউপি সদস্য ফাতেমা বেগম জানান, আমার ছেলে ভারতে গিয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করে। আমরা ২০/২৫ বছর পর ঘটনাটি জানতে পেরে ছেলের উপর অসন্তুষ্ট হই। তাকে বলে দেই তুই যদি মুসলমান হয়ে আসতে পারিস তাহলে আমাদের সাথে সর্ম্পক থাকবে। বাড়ীতে আসার পরও দেখি সে আগের মতো রয়ে গেছে, তাই আমরা তাকে বাড়ীতে উঠতে দেইনি। পরে হুজুরের মাহফিলে আমার ছেলে তার পরিবার ও সন্তনদের নিয়ে মুসলমান হয়েছে।

মাহফিল এন্তেজামিয়া কমিটির পক্ষে মাওলানা জামশেদ আল মাক্কী জানান, তাদের সবার জন্মনিবন্ধন কার্ড দেখে উকিলের মাধ্যমে কোর্ট এফিডেভিটের মাধ্যমে তাদের সবাইকে কলেমা পাঠ করিয়ে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, মনির হোসেন নামে যিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন তার কাছে আমরা ভারতীয় বৈধ পাসপোর্ট পেয়েছি, যাতে তার নাম শংকর অধিকারী। তার সাথে অন্য যারা আছেন তাদের কয়েকজনেরও বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট আছে। তারা গত বছরের ১৪ আগস্ট ২ মাসের ভিসা নিয়ে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।

পুলিশ সুপার আরও জানান, তাদেরকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

/এসএস

মন্তব্য করুন