
ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেছিলেন সদ্য ভুমিষ্ট জান্নাতুলকে। খালি মেঝেতে পড়ে থাকা জান্নাতুলের ছোট্ট দেহ পলিথিনে মোড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল হাসপাতালের আয়ারা! দাফন-কাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বজনরা। ওই সময়ে সন্তানকে শেষবারের মতো কোলে নেন মা জিনিয়া খাতুন। এমন মায়ের কোলে নড়ে ওঠে জান্নাতুল। আজ মঙ্গলবারা মায়ের কোলেই মারা যায় জান্নাতুল।
ঘটনাটি গতকাল সোমবারের চুয়াডাঙ্গার। সোমবার ভোরে সদ্যভুমিষ্ট জান্নাতুলকে মৃত ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ডাক্তার। এরপর সকালে মায়ের কোলে নড়ে ওঠার পর জান্নাতুলকে নেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে জান্নাতুল।
কিন্তু আজ সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার পথে মায়ের কোলেই শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করে জান্নাতুল।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মুদি দোকানি আবদুল হালিম ও জিনিয়া খাতুনের বিয়ে হয় বেশ কয়েক বছর আগে। এরই মধ্যে জিনিয়ার গর্ভে সন্তান আসে। তাকে নিয়মিত চেকআপ করতেন জেলা শহরের উপশম নার্সিং হোমের স্বত্বাধিকারী ডা. জিন্নাতুল আরা। রোববার বিকালে জিনিয়ার পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে নেয়া হয় ডা. জিন্নাতুল আরার কাছে। সেখানে তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন জিনিয়া। সোমবার রাতের শেষভাগে ৪টার দিকে কন্যাসন্তান প্রসব করেন জিনিয়া খাতুন।
জিনিয়া খাতুন বলেন, ‘ভোরে আমাকে বলা হলো বাচ্চা মারা গেছে। এরপর আমরা পরিবারের অন্যান্যকে জানাই। দাফন কাফনের জন্যও প্রস্তুতি নিতে থাকে স্বামী ও স্বজনরা। এরই মধ্যে শিশুটিকে অযত্ন অবহেলায় মেঝের ওপর রেখে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মৃত বলে তাকে একটি পলিথিন এনে মুড়িয়ে ফেলা হচ্ছিল।
এ সময় আমি কাঁদতে কাঁদতে মেয়েকে একবার শেষবারের মতো কোলে নিয়ে দেখতে চাই। কোলে নিতেই আমার মেয়ে নড়ে ওঠে। এ সময় পুনরায় ডা. জিন্নাতুল আরাকে ডাকা হলে তিনি শিশুকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।’ জিনিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ডাক্তারের কথায় বিশ্বাস করলে পলিথিনের মধ্যে আমার মেয়ে মরে থাকত।’
এদিকে সোমবার সকালে ওই শিশুকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটিকে একনজর দেখতে ভিড় করে অন্যান্য রোগী ও স্বজনরা।
শিশুর দাদি শাহারন বেগম বলেন, ‘ও সাত মাসে জন্ম নিয়েছে। আমি ওর নাম রেখেছি জান্নাতুল। সে এখন ভালোই আছে। হাত-পা নেড়ে খেলছে। পিটপিট করে তাকাচ্ছে। আমার বিশ্বাস জান্নাতুল বেঁচে থাকবে।’
এ ব্যাপারে ডা. জিন্নাতুল আরা বলেন, ‘শিশুটি যখন হয় একেবারেই শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল না। নাভির কাছে কেবল ঢিবঢিব শব্দ ছিল। চার ঘণ্টা অক্সিজেন দেয়ার পর সে কিছুটা সুস্থ হলে আমরা আজ (সোমবার) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘নবজাতকটি অপুষ্ট হয়ে জন্মেছিল। মঙ্গলবার সকালে তার অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যায়। এ কারণে দুপুরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।’
চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে মায়ের কোলেই শেষ বিদায় নেয় জান্নাতুল।
নবজাতক জান্নাতুলের পিতা আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা জান্নাতুলকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে বেলা পৌনে ১টার দিকে মায়ের কোলেই চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে যায় সে!’
জান্নাতুলের এমন মৃত্যুত্যে এলাকায় ছোকের ছায়া নেমে আসে। শেষবারের মতো দেখতে গ্রামের কৌতূহলী লোকজন এ সময় বাড়িতে ভিড় জমায়। বিকালে তাকে বাড়ির পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
/এসএস

