

টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের শেষ প্রস্তুতির কাজ। গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও তাবলিগ জামাতের সাথিরা এসব কাজ করছেন। মুসল্লিদের নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তৎপর স্থানীয় প্রশাসনও। আগামী ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুই পর্বের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিবাদে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। এবার কোনও পক্ষেরই পাঁচ দিনের প্রস্তুতিমূলক সমাবেশ ‘জোড়’ ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১২ জানুয়ারি (রবিবার) শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা।
চার দিন বিরতি দিয়ে সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ১৭, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি (রবিবার) সমাপ্তি ঘটবে ২০২০ সালের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা।
ইজতেমা মাঠে কেউ খুঁটির ওপর চট টাঙাচ্ছেন, কেউ লোহার খুঁটি ও পাইপ দিয়ে মূল মঞ্চ তৈরি করছেন, কেউ টয়লেট নির্মাণের কাজ করছেন, কেউবা বালু দিয়ে মাঠ সমান করছেন। এছাড়া কেউ কেউ তাঁবু টাঙানো, নামাজের লাইন তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। দলবদ্ধ হয়ে ভাগ করে ইজতেমার প্রস্তুতিমূলক কাজ করছেন তারা।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদের ওপর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সাতটি ভাসমান সেতু তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া বিদেশি মুসল্লিদের থাকার জন্য ইজতেমা মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে তুরাগ তীরে টিন-চট দিয়ে বিশেষ কামরা নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদেশি আবাসনের পশ্চিমে তুরাগ পাড়ে তাদের রান্নার চুলা ও রন্ধনশালা নির্মাণ করা হচ্ছে।
টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইতোমধ্যে ময়দানে তাঁবু টাঙানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা ময়দানে কাজ করছেন। সার্বিক কার্যক্রম প্রায় সম্পন্ন। উত্তরা, গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকা থেকে মুসল্লিরা সকাল থেকেই ইজতেমা মাঠে এসে মাঠ তৈরির কাজে যোগ দিচ্ছেন।
মাওলানা জুবায়ের কর্তৃক ইজতেমা মাঠের মুরুব্বি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা মঞ্চসহ বয়ানমঞ্চ প্রস্তুত করছেন তারা। মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ইজতেমা মাঠে আল্লাহকে খুশি করতে কাজ করছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন ইজতেমা মাঠের উঁচু-নিচু জায়গা ও রাস্তাঘাট সমান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের শামিয়ানার কাজ প্রায় শেষের পথে। মুসল্লিদের যাতায়াতসহ ময়দানে সুযোগ-সুবিধায় তুরাগ নদে সেনাবাহিনী ভাসমান সেতুর কাজ করছে। একই সঙ্গে ইজতেমার মাঠজুড়ে বিদ্যুতের তার ও পানির পাইপ টানার কাজও চলছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তায় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৬৩ সাল থেকে। জানুয়ারির ১০ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইজতেমা হবে ৫৭তম। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইজতেমা তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা এই ইজতেমায় অংশ নেন বলে এটি বিশ্ব ইজতেমা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো। তাবলিগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলভী ও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীর বিরোধের কারণে গত বছর থেকে দুই পক্ষ তিন দিন করে আলাদাভাবে ইজতেমার আয়োজন করতে শুরু করে।
ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস