

ভারতজুড়ে চরম হিন্দুত্ববাদের উত্থান করতে চলা হিন্দুত্ববাদী নেতা মোদি-অমিত শাহর বিজেপি একের পর এক ভরাডুবির দিকে যাচ্ছে। ভারতের উগ্র সংগঠন বিজেপি থেকে ধিরে ধিরে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারতের জনগণ। সম্প্রতি ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) চরম ভরাডুবি ঘটেছে। এবং এই ভরাডুবিকে বিজেপির নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিক সংশোধনী আইনের বিপক্ষে জনগণ প্রতিবাদ হিসেবে ব্যাক্ত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়।
ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, গত ৩০ নভেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, ৮১টি আসনের মধ্যে বিরোধী দল কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) জোট ৪০ টি আসনে এগিয়ে আছে। অন্যদিকে বিজেপি মাত্র ৩১ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর সরকার গঠনে প্রয়োজন ৪১টি আসন। তবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এখানে ১৪টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জয়ী হয়েছিল। তবে বিধানসভা নির্বাচনে তারা চরমভাবে পরাজিত হলো।
কেবল ঝাড়খন্ডেই নয় বরং সম্প্রতিকালে বেশ কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। সাম্প্রতিককালের কয়েকটি পর পর বিধানসভা নির্বাচনে নিজের পোক্ত জমি খুইয়েছে বিজেপি। তারমধ্যে ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ অন্যতম উদাহরণ। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়েও শেষপর্যন্ত আসন রক্ষা করতে পারেনি বিজেপি সরকার। সেখানে বিজেপিকে ছেড়েই শিবসেনা ও কংগ্রেস-এনসিপি জোট গড়ে সরকার তৈরি করেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে ঝাড়খন্ডে বিজেপির তলিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক ট্রেন্ড ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
অপরদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চলেছেন শিবু সোরেনের পুত্র হেমন্ত সোরেন। তিনি ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এদিকে পরাজয় স্বীকার করেছেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। সোমবার বিকেলে রঘুবর দাস বলেন, ‘‘মানুষের রায় মাথা পেতে নিচ্ছে বিজেপি।’’ নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য তিনি গেরুয়া শিবিরকে দায়ী করেছেন। তার অভিযোগ, বিজেপির দম্ভ, অর্জুন মুন্ডার মতো আদিবাসীদের একঘরে করার কারণে নির্বাচনে বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
তবে বিজেপির অভিযোগ, এবারের নির্বাচনে রাজ্যের অন্যান্য দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে রঘুবর দাস। বিজেপি’র শরিক আজসু নেতা সুদেশ মাহাতোকেও অবজ্ঞা করতেন তিনি। এছাড়া দলের নেতাদের সঙ্গে তার সর্বদা বিরুপ সম্পর্ক ছিল। এই কারণে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন তারা।
নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এক টুইট বার্তায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে অভিনন্দন জানান। এই নির্বাচনের ফলাফল নাগরিকত্ব বিল ও নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দেশটির পার্লামেন্টে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের পর বিক্ষোভের মধ্যেই ঝাড়খণ্ডে ৩ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে বিলের বিরুদ্ধে মানুষের তীব্র প্রতিবাদের প্রভাব পড়তে পারে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আঞ্চলিক দল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (এজেএসইউ) সঙ্গে জোট বেঁধে রাজ্য বিধানসভার ৮১টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে একটি বেশি ছিল। অন্যদিকে অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন পেয়েছিল মাত্র ৫টি আসন। আর কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন।
ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় বিষয়গুলো প্রাধান্য পেলেও সেখানে বিজেপির পরাজয় হলে তা দলটির নীতিগত পরাজয় বলেই বিবেচনা করা হবে। এ কারণে ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুরো দেশ।
বিশ্লেষকদের ধারণা অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আজসু) এর সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার কারণেই নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে বিজেপি’র। কারণ ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে শতাংশের হিসেবে প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় খুব বেশি হেরফের না হরেও বিজেপির আসন কমেছে বেশ কয়েকটি। আবার প্রাপ্ত ভোটের হার বেড়েছে আজসুর। ফলে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে যে ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো তা স্বীকার করেছেন বিজেপি’র শীর্ষ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। গত বছর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভার নির্বাচনেও কংগ্রেসের নিকট পরাজিত হয়েছিল বিজেপি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে বিজেপি’র জাতীয় মুখপাত্র বিজয় সোনকর শাস্ত্রি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের ফলাফল সম্পর্কে যা আশা করা হয়েছিল অনুরুপ ফলাফল লাভে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ বিজেপির লক্ষ্য ছিল ৬৫টি আসন। ফলে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, বিজেপি তার উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বিষয়ে ঝাড়খণ্ডের জনগণকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।’’ ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড রাজ্য হওয়ার পর এটি রাজ্যের চতুর্থ বিধানসভা নির্বাচন।