

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা সফরে যান। কলকাতার প্রভাবশালী আনন্দবাজার জানিয়েছে, কিন্তু তাঁকে স্বাগত জানাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মন্ত্রী, এমনকি শীর্ষ আমলাকেও পাঠানো হয়নি। যা কি না বাঁধাধরা কূটনৈতিক প্রথা এবং সৌজন্যের বিরোধী। কেন এমন উদাসীনতা প্রদর্শন, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছে না কেউ। তবে বিদেশ মন্ত্রনালয় সূত্রের খবর, ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতাই মূল কারণ। এক দিকে তাঁরা যখন দেশজুড়ে এনআরসি করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশছাড়া করার কথা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত এনআরসি-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতেই চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা। কিন্তু সিনিয়র কোনও আমলাকেও কেন কলকাতায় পাঠায়নি মোদী সরকার, তা নিয়ে চুপ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা। সব মিলিয়ে দিল্লির এই আচরণে পাশাপাশি মিত্র দেশের সাথে যে ভদ্রতা এবং সৌজন্যতার বিপরিত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে এবারই প্রথম নয়, গত অক্টোবরেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিমান যখন নয়াদিল্লিতে নামে, তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে সরকারের তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বা আমলা উপস্থিত ছিলেন না। বরং সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে পাঠানো হয়েছিলো। এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
এদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতের স্বার্থরক্ষায় সবকিছুই করেছেন। ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলেও দাবি, বিভিন্ন মঞ্চে এ কথা বার বার বলেছেন খোদ মোদী। এমনকি সম্প্রতি বাংলাদেশ তিস্তার পানি না পেলেও ফেনী নদীর পানি দিয়ে এসেছে বাংলাদেশ এবং ভারতের অনুরোধে ঢাকা তাদের দেশের ভিতর দিয়ে আসাম-ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহণের জন্য ‘ফি’ এক ধাক্কায় টন প্রতি ১০৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে করেছে ১৯২ টাকায়। এছাড়াও ভারতের যে কোন স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ এক পায়ে খাড়া থাকে সব সময় কিন্তু সেই ভারতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত এমন অবজ্ঞা করার বিষয়টি সচেতন মহলে বেশ গুঞ্জনের সৃষ্টি করেছে।
এটি নিয়ে আনন্দবাজার তাদের বিশ্লেষণে লেখেছে, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রা কাড়তে না চাইলেও দিল্লির এই উদাসীনতা যে ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার পক্ষে চাপের, সে কথা ঘরোয়া ভাবে জানানো হচ্ছে। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুমকির ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা বাড়ছে। দিল্লির আচরণ তাকে উস্কে দিতে পারে।
প্রসঙ্গত : বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ঐতিহাসিক দিবারাত্রি টেস্টের উদ্বোধনীতে অংশ নিতে কলকাতায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইটটি গত শুক্রবার বেলা ১১টার কিছু সময় আগে কলকাতার নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে শুক্রবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে কলকাতার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান প্রধানমন্ত্রী।
পরের দিন রাত ১০টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। ফ্লাইটটি রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
এইচরআরএইচ/