

বাইজিদ আল-হাসান (ওমান প্রতিনিধি) প্রবাসীরা চলতি (২০১৫-১৬) অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোট ১৩৪ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বরাবরের মতো রেমিটেন্স পাঠানোর দিক থেকে সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে।এদেশ থেকে মোট ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।
সৌদির পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এ দেশ থেকে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এরপরেই রয়েছে কুয়েত, এ দেশ থেকে ৮ কোটি ৮৯ লাখ রেমিটেন্স এসেছে, আর কুয়েতের পরই চার নাম্বারে রয়েছে ওমান।
ওমান থেকে ৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। পরিবার পরিজন ছেড়ে দূর প্রবাসে রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের অর্থনীতিতে এমন ভূমিকা রাখলেও এই প্রবাসীরা এয়ারপোর্টে ভোগান্তি, জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট ইস্যু সহ বিভিন্ন কাজে হয়রানির শিকার হন, এমনকি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসে মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ টি দেশে পাঠাতে গুনতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ! ওমান থেকে এতো বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে গেলেও আজ হাজারো শ্রমিক বিনা কারনে জেলখানায় বন্দী, শুধুমাত্র একটি টিকেটের জন্য মাসের পর মাস জেল খাটছে বহু রেমিটেন্স যোদ্ধা।

বাংলাদেশ বিমান
হাসপাতালের মর্গে পরে আছে বহু রেমিটেন্স যোদ্ধার মরদেহ। শুধুমাত্র টাকার জন্য পাঠানো যাচ্ছেনা মরদেহ গুলো। রাতে ঘুমের ঘরে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের। গ্রেফতার আতংক, পারিবারিক চাপ, কাজের অনিশ্চয়তা, এইসব কারনে অল্প বয়সে প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে অনেক রেমিটেন্স যোদ্ধা।
প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখার জন্য রয়েছে একটি মন্ত্রণালয়, সেইসাথে আর্থিক সেবা দিতে রয়েছে একটি ব্যাংক ও। নিজস্ব মন্ত্রণালয় ও ব্যাংক থাকার পরেও কতটুকু উপকৃত হচ্ছেন এই প্রবাসীরা, এই প্রশ্ন আজ সকল প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। বাংলাদেশের অর্থনিতির সমৃদ্ধি,একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ আর একজন প্রবাসীর স্বপ্ন একই সুতোয় গাথা থাকলেও প্রবাসীরা কখনো কখনো নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
যেনো দেখার কেউ নেই। দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবৎ মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক রেমিটেন্স যোদ্ধার দেশে ফেরার আকুতিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওমানের সুমাইল হাসপাতালের আকাশ বাতাশ। সেখানে যেনো মানবতা নির্বাসিত। এক দিকে কতৃপক্ষের হসপিটাল ত্যাগের নির্দেশ অন্য দিকে দেশে ফিরতে নিজের দেশের সরকারি বিমান সংস্থার অসহযোগিতা সব মিলিয়ে এই অসহায় মানুষটি এখন পরিণত হয়েছে জীবন্ত লাশে। চট্টগ্রাম জেলার বাশখালী থানার সাধনপুর বদরের দরগা এলাকার মোঃ বেলাল হোসেন পিতা আব্দুল ছালাম একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পাঁচ মাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এখনো সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে উঠেনি ।
ডাক্তারদেদের বক্তব্য হলো ওনি হয়তো আর কোন দিনই সম্পুর্ন সুস্থ হবেননা সুতরাং নিজের পরিবার পরিজনের কাছাকাছি থাকলে হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় স্বাভাবিক হলেও হতে পারেন। বীমা কোম্পানি অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় এখন চিকিৎসাও বন্ধ। অন্যদিকে দেশেও আসতে পারছে না কারন নিরাপত্তার দোহাই আর ছোট বিমানের অজুহাতে বিমান বলছে এমন রুগী তারা বহন করবেনা আর অন্য এয়ারলাইন্স গুলোতে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি যা বহনকরা এই রুগীর পক্ষে অসম্ভব।

বাংলাদেশ বিমান
ওমানে নিযুক্ত বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার নিজের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলেন দেখুন এসব রুগী পাঠানোর ক্ষেত্রে উপরের কিছু নির্দেশনা আছে আমরা চাইলেও এর বাহিরে যেতে পারছিনা। বিমানে ভ্রমণ সুবিধার জন্যে কিছু নিয়ম ও শর্তের কথা বলেছেন এই কর্মকর্তা যা একজন রুগী নয় কেবল একজন সুস্থ মানুষেরই হতে পারে।
দেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থার এমন উদাসীনতায় হতাশ এই ভুক্তভোগী ছাড়াও গোটা ওমান প্রবাসীরা। ক্ষোব প্রকাশ করেছেন অনেকেই দেশের পতাকাবাহী এই বিমান সংস্থাটির উপর। বারবার বিমান কর্মকর্তাকে অনুরোধের পরও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রবাসীরা এহেন দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং তারা বলেন একজন প্রবাসী যতক্ষণ সুস্থ থেকে দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে অসামান্য ভূমিকা রাখছেন ততক্ষণ তাকে সূর্য সন্তান,রেমিটেন্স যোদ্ধা আরো কতো নামে ডাকা হয় আর যখন একজন প্রবাসী বিপদে পরে তখন তারা সরকার থেকে তেমন কোন সাপোর্ট পাননা।
এটাকে তারা প্রবাসীদের সাথে প্রতারণা বলেই আক্ষায়ীত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যেনো বিমানে রুগী কিংবা লাশ বহনে নিয়মনিতি গুলো আরো সহজতর করে বিনা খরচে দেশে ফেরত পাঠিয়ে প্রবাসীদের এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দূতাবাসের কাউন্সিলর শ্রম টেলিফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দূতাবাসের লেবার উইংয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলেন।

বাংলাদেশ বিমান
পরে আব্দুর রহমান বলেন এ বিষয়ে দূতাবাসের বক্তব্য হচ্ছে তারা এ রকম আরো অনেক রুগী ও লাশ দেশে পাঠানো নিয়ে নিজেরাও যথেষ্ট বিপাকে রয়েছেন। ইতি পূর্বে দূতাবাসও বিমানকে অনুরোধ করে ব্যার্থ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন এ কর্মকর্তা। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বিমান মন্ত্রণালয়,ফরেন মিনিষ্ট্রির সচিব ও মন্ত্রী বরাবর অনেক বার ব্যাবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেও কোন ফল হয়নি বলেও মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
তার দাবি প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত করতে মান্যবর রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার দেশের একমাত্র সরকারি বিমান সংস্থা ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ অব্যহত রাখেন। অন্য দিকে প্রবাসীরা বলছেন তাদের সাথে এহেন অমানবিক ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার প্রধান উপদান হতে পারে,তাই কোন রকম কাল ক্ষেপন ছাড়াই দ্রুত ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।