

ইসমাঈল আযহার
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে থমথমে পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই দুই মাস পর আবার খুলছে সেখানকার স্কুল। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ওই অঞ্চলের সবগুলো স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার কথা। চলতি বছর ৩৭০ ধারা বাতিলের পর কারফিউ জারি করায় বন্ধ ছিলো স্কুলগুলো।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের সায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা।১৫ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার শ্রীনগরের ৯০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯৬টি খুলে দিলেও শিশুদের পাঠাতে ভয়ে ছিলেন অভিভাবকেরা।
ভয়াবহ আকারে সামরিকায়িত এ উপত্যকায় ইতোমধ্যেই অবস্থান করছে ভারতীয় বাহিনীর প্রায় সাত লাখ সদস্য। উপত্যকার সব ডেপুটি কমিশনার এবং স্কুল শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক বশির আহমেদ খান বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান, এই দুইমাস যেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনও টিউশন ফি বা পরিবহন ফি নেওয়া না হয়।
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করতে বলেন বৃহস্পতিবার যেন সবগুলো সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া আগামী ৯ অক্টোবর খুলবে কাশ্মিরের কলেজগুলো।
এর আগেও স্কুলগুলো খোলা হলেও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়নি। শুধু শিক্ষক আর কর্মীরা গিয়েছিলেন স্কুলে। এই পরিস্থিতির যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য মঙ্গলবার শিক্ষক-অভিভাবক বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাশ্মির সরকারের মুখপাত্র জানান, সোমবার বৈঠকে জানানো হয় যে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই পদক্ষেপকে ঘিরে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত সেনা। সেখানকার অধিবাসীদের ওপর চলাচলে রয়েছে বিধিনিষেধ। গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। তাদের বেশিরভাগকে এ রাজ্যের বাইরে কারাগারে ও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় বন্দি রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক যুবক ও কিশোর রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার ( ১ অক্টোবর) ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের উপত্যকার সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৪৪ শিশুকে আটক করার কথা স্বীকার করে স্থানীয় প্রশাসন। ৯ থেকে ১১ বছর বয়সী ওই শিশুদের বিভিন্ন হোমে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
এদিকে দু’মাস গৃহবন্দি থাকার পরে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন জম্মুর রাজনৈতিক নেতারা। ব্লক উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনের কারণে ছাড়া হচ্ছে জম্মুর নেতাদের। জম্মুর নেতারা মুক্তি পেলেও কাশ্মীরী নেতাদের গৃহবন্দি দশা এখনই কাটছে না।
গত সোমবার জম্মু কশ্মীরের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জম্মুতে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্যেই মুক্তি দেওয়া হয় দেবেন্দ্ সিংহ, রমন ভাল্লা, চৌধুরীলাল সিংহ, ভিকার রসুল, জাভেদ রানা, সুরজিৎ সিংহ স্লাথিয়া, সাজ্জাদ আহমেদ কিচলুকে। এদিন সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, জম্মু এখন অনেকটাই শান্ত। সেই কারণে ছাড়া হচ্ছে এই নেতাদের।
আই.এ/পাবলিক ভয়েস