যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ইমরানের

প্রকাশিত: ৯:১০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
ইমরান খান। ফাইল ছবি।

আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে আফগানিস্তান থেকে হটানো এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের যে পররাষ্ট্রনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নাইন ইলেভেনের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশগ্রহণকে ‘বড় বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন (সিআরএফ) নামে একটি গ্রুপের আয়োজনে এক আলোচনায় অংশ নেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

সেসময় ইমরান খান বলেন, ‘১৯৮০র দশকে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা দিয়ে সোভিয়েত প্রতিরোধ সংগঠিত করে। আর ওই প্রতিরোধ সংগঠিত করতে সোভিয়েতবিরোধী জেহাদে অংশ নিতে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তানি আইএসআই (ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা)। সোভিয়েতবিরোধী লড়াই করতে এসব জেহাদি সংগঠন তৈরি করি আমরা… জিহাদিরা তখন বীরের মর্যাদা পেত। ১৯৮৯ সাল আসলো, সোভিয়েত আফগানিস্তান ছেড়ে গেল, যুক্তরাষ্ট্রও গুটিয়ে নিয়ে আফগানিস্তান ছাড়লো… আর আমাদের কাছে থেকে গেল এসব গোষ্ঠী’।

ইমরান বলেন, ‘এক সময় ৯/১১ আর পাকিস্তান আবারও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দিলো। আর আমাদের এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে যাওয়ার দরকার পড়লো। জিহাদের সময় তাদের বৈদেশিক দখলদারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে এলো তখন তারা হয়ে গেল সন্ত্রাসবাদী’। এই সংঘাতে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ থাকা উচিত ছিলো বলে মন্তব্য করেন ইমরান খান।

সোমবার নিউ ইয়র্কে জেনারেল পারভেজ মুশারফের সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে ৭০ হাজার পাকিস্তানি নিহত হয়েছে আর হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ইমরান বলেন, যেটা সম্ভব নয় তা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া পাকিস্তান সরকারের উচিত হয়নি।

ইমরান বলেন, ‘বিপুল সংখ্যক শরণার্থী থাকায় পাকিস্তান এই সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধও করে দিতে পারছে না। আমার মনে হয় না আাফগানিস্তানে যে যুক্তরাষ্ট্র সফল হতে পারছে না তার কারণ পাকিস্তান। সরলভাবে কারণ হলো এর পিছনে ইতিহাস আছে; এটা কখনোই সম্ভব হবে না।’ আফগান তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়াকে পাকিস্তানের জন্য কষ্টকর বলে মন্তব্য করেন ইমরান খান।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি সব সময়ই বলে এসেছেন আফগানিস্তানের সংকটের কোনও সামরিক সমাধান নেই। পাকিস্তান থেকে গিয়ে বিদ্রোহীরা আফগানিস্তানে হামলা চালাচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানে প্রায় ২৭ লাখ আফগান শরণার্থী রয়েছে। আর উপজাতি এলাকায় সত্যিকার কোনও সীমান্ত নেই। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা কিভাবে জানবো যে কে যাচ্ছে আর আসছে?’

ইমরান বলেন, আলোচনা ভেঙে দেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। ইমরান খান বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জোর দেবেন যে আফগানিস্তান সংঘাতের কোনও সামরিক সমাধান নেই। তিনি বলেন, ১৯ বছরে যদি আপনারা সফল হতে না পারেন তাহলে আগামী ১৯ বছরেও সাফল্য পাবেন না।

ইসমাঈল আযহার/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন