জায়গা না থাকায় স্বর্ণ কিনতেন এনামুল, কোটি টাকাসহ ৭২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার

প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯

ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের এই শেয়ারহোল্ডার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক তার নিজের বাসায় রাখতেন ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত টাকা। সেই টাকা রাখতে বাড়ির আলমারির ভল্টে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্বর্ণ কিনতেন তিনি। এনামুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আজ নগদ কোটি টাকাসহ ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

সূত্রাপুরের বানিয়ানগরের নিজ বাড়িতে তিনি ক্যাসিনোর টাকা রাখার জন্য তিনটি ভল্ট বানিয়েছেন। আরো একটি বাড়িতে পাঁচটি ভল্ট ছিল তার। এক এক ভল্টের চাবি চেনার জন্য ভল্টের উপরে লিখে রাখতেন চাবির নাম্বার। তবে সেখানেও টাকা রাখার জায়গা হতো না। তাই টাকা দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার কিনতেন। মঙ্গলবার র‍্যাব তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তিনটি ভল্ট থেকে এক কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করে।

অন্যদিকে লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালামের বাসায় একটি সিন্দুক পাওয়া গেছে। সেটি ভাঙার পর পাওয়া গেছে দুই কোটি টাকা। ওই বাসা থেকে একটি পিস্তলও উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

আর শরৎগুপ্ত রোডে এনামুল হকের বন্ধু হারুন-অর-রশিদের বাসায় পাওয়া গেছে পঞ্চম সিন্দুকটি। সেখানে আরও অন্তত দুই কোটি টাকা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

ভল্টভর্তি টাকা

সোমবার মধ্যরাত থেকে র‍্যাব-৩ এনামুলের বাসায় অভিযান চালায়। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান শেষে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, সূত্রাপুরের বানিয়ানগরে এনামুলের ছয়তলায় বাসার দোতলা ও পাঁচতলা থেকে তিনটি টাকার ভল্ট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ইংলিশ রোডে আরও পাঁচটি ভল্ট ভাড়া নিয়েছেন টাকা রাখার জন্য।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ভল্টগুলো খোলা হয়। সেখান থেকে তারা এক কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া পাঁচটি অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে র‍্যাব। স্থানীয়রা জানান, এসব অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন এনামুল ও তার ভাই গেণ্ডারিয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া।

র‍্যাব আরও জানায়, এনামুল ও রুপনদের ১৫টি বাড়ি আছে ঢাকায়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার এনামুলের ক্লাবের টাকা এনে বাসায় রাখতেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গাও হতো না। তাই টাকা দিয়ে তিনি সোনা কিনে রাখতেন।

র‌্যাব বলছে, এনামুল হক এক সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ড চলে গেছেন এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়া পলাতক। র‍্যাব তাকেও খুঁজছে।

র‍্যাব আরও জানায়, নারিন্দার একটি বাসায় এনামুলের আরও একটি ভল্টের সন্ধান মিলেছে। সেখানেও অভিযান চালানো হবে।

রোববার মতিঝিলের চারটি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ক্লাবগুলো হলো- আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। অভিযানে চারটি ক্লাবেই ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র‌্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তার মালিকানাধীন ইয়াংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে নারীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়।

শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য ছাড়াও এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করার নথি জব্দ করা হয়।

/এসএস

মন্তব্য করুন