১৪-১৫ লাখ মানুষ ফেরত নিতে বলা হবে বাংলাদেশকে: আসামের অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯
আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯ লাখ লোক বাদ পড়ার একদিন পরেই রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের এই ১৪-১৫ লাখ লোককে ফিরিয়ে নিতে বলা হবে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতের খসড়া নাগরিক (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এনআরসি) তালিকা থেকে উত্তর-পূর্ব আসাম রাজ্যের প্রায় ৪০ লাখ বাঙ্গালী বাসিন্দা বাদ পড়েন। শনিবার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে করা চূড়ান্ত এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ বাঙ্গালীর নাম। প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে ৩,১১,২১,০০৪ জনের নাম। বাদ পড়েছে ১৯,০৬,৬৫৭ জনের নাম।

তালিকায় নাম থাকার পরও নামের বানানে ভুল থাকায় বাদ পড়েছেন মীনা হাজারিকা ও তার দুই মেয়ে

গত কয়েক বছরের আসামের জনতত্ত্বের পরিবর্তন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, এটা কোনও মিথ্যা নয়। আপনি যদি আদমশুমারির পরিসংখ্যানের দিকে তাকান, তাহলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমরা বেশ কিছু সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং তা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছি। আসামের আদিবাসীরা নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। আমরা ১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করেছি। এটা প্রমাণিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা আমরা আমলে নিচ্ছি না। অবৈধ বিদেশিরা তার ভোটব্যাংক।

তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বহু শিশুর নাম

আসামের অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতের বন্ধু এবং আমাদের সহযোগিতা করছে। অবৈধ অভিবাসীদের বিষয় তুলে ধরা হলে তারা নিয়মিতই তাদের ফেরত নিচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যা খুব বেশি না। কিন্তু এখন তাদের চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া আমাদের রয়েছে। এনআরসিতে মানুষের নাম থাকার অর্থ এই নয় যে, তাদের বিদেশি বলা হবে এবং বাংলাদেশে পাঠানো হবে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন তারা।এর আগ পর্যন্ত তারা দেশের কোনও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।

তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিক

এনআরসি প্রক্রিয়া নিরর্থক নয় উল্লেখ করে হিমন্ত শর্মা বলেন, ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে শরণার্থী হিসেবে যারা এসেছেন, তারা সমস্যায় পড়বেন। আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তালিকায় স্থান পেতে অনেকেই এনআরসি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের সমন্বয়কারী এই বিজেপি নেতা দাবি করেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসামের জেলাগুলোর ২০ শতাংশ ও বাকি আসামের ১০ শতাংশ নাম পুনরায় যাচাই করার জন্য।

প্রথমবার বাদ পড়েছিল ৪০ লাখ বাঙালী

আসামের অর্থমন্ত্রী বলেন, এনআরসি ১৯৭১ সালের শরণার্থী সনদপত্র আমলে নেয়নি। কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আপিলে তা আমলে নেওয়া হবে। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়াদের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ। এদের মধ্যে যাদের বাবা-মা তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারাও অন্তর্ভুক্ত হবে। পুরো প্রক্রিয়া যখন শেষ হবে তখন বাদ পড়াদের সংখ্যা ৬-৭ লাখে দাঁড়াবে, যা খুবই কম।

আন্দোলন করছেন আসামের বাঙালী মুসলিম নাগরিকরা

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আসামের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এনআরসি। কারণ, পুরো প্রক্রিয়ায় মাত্র ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। যাদের মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার আপিল করার প্রয়োজন বোধ করেনি এবং মারা গেছে। ফলে সত্যিকার অর্থে বাদ পড়েছে ১৫ লাখ। এদের মধ্যে ৫-৬ লাখ মানুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে।

আই.এ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন