খাঁচায় বন্দী কাশ্মীর; এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পুরো বিশ্ব থেকে

প্রকাশিত: ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৯

ইসমাঈল আযহার: পুরো বিশ্ব থেকে এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর৷ এমনকি এক এলাকার লোকজন অন্য এলাকার খবরও পাচ্ছেন না৷ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে সেনা-পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ছবি৷ সোমবার (৫ আগস্ট) ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর থেকে কাশ্মীরজুড়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি ও এক ধরনের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ এরই মধ্যে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক জন নিহতের ঘটনা সামনে এসেছে। অবশ্য পাকিস্তানি পত্রিকা ডন নিউজের কলামিস্ট  রাজিয়া সায়েদা চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত অধিকৃত কাশ্মীরে ২ হাজারেরও বেশি নিপীড়িত কাশ্মীরি নিহত হয়েছে বলে তার কলামে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে জানিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় এমন কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল৷ বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণার পর থেকে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে অঞ্চলটিকে৷ বিক্ষোভ ঠেকাতে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জারি করা হয়েছে কারফিউ৷

মোদির এমন পদেক্ষেপের ওপর প্রশ্ন তুলেছেন নামধন্য ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায়।  নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ লেখা নিবন্ধে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সরকার যেখানে নিজেই দাবি করে যে গুটিকয়েক জঙ্গি ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ তাদের সমর্থন করে, সেখানে কেন লাখ লাখ সেনার উপস্থিতি। অরুন্ধতী মনে করেন, প্রথম মেয়াদে নরেন্দ্র মোদির কঠোর অবস্থানের কারণে কাশ্মীরে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ জন সদস্যকে। বুকারজীয় এই লেখিকা তার নিবন্ধে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের দুই মাস পার হয়ে গেছে। তার সরকার সবচেয়ে বিপজ্জনক চালটি দিয়েছে।

কাশ্মীরকে এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকীকরণ করা এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ঘোষণার আগে-পরে তার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে অতিরিক্ত সেনা৷ কড়া নিরাপত্তার কারণে বেশিরভাগ মানুষই ঘরের মধ্যে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন৷ স্কুল-কলেজ, দোকানপাট এমনকি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে৷ ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবা বন্ধ থাকায় কাশ্মীরের কোনো তথ্যও বাইরে আসছে না৷

গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে৷ খুব অল্প সংখ্যক হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স খোলা রয়েছে৷ জার্মানের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রশীদ আহমেদ নামের এক দোকানদার বলছেন, ‘সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে জরুরি সেবার ওপর৷ আমার চাচাকে ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতাল নিতে হবে, নিরাপত্তাকর্মীদের এটা বোঝাতেই আমার দুই দিন লেগেছে৷ তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল৷’

এরই মধ্যে ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেইসঙ্গে ভারত যাতে স্থলপথে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে বলে পাকিস্তান সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার এক টুইটার পোস্টে একথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ফাওয়াদ হুসেইন চৌধুরি।

গত সোমবার (২৬ আগস্ট) ইমরান খান জানেন, ক্ষমতায় আসার পর একাধিক বার ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, শান্তি স্থাপনে ভারত এক পা এগোলে, চার পা এগোব আমরা। তিনি বলেন,যতক্ষণ পর্যন্ত কাশ্মীর স্বাধীন না হবে, প্রতিটি ফোরামে আমি এই বিষয়ে সর্বোচ্চ আওয়াজ তুলব। নিজেকে ‘কাশ্মীরি দূত’ বলে উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, কাশ্মীর স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমার চেষ্টা চলবে। কাশ্মীরি জনগণকেও আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, কাশ্মীর ইস্যুটি নিয়ে আমি সারা বিশ্বে কাজ করব। এদিন ফের একবার পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, ‘যদি কাশ্মীর দ্বন্দ্ব যুদ্ধে দিকে যায়, তাহলে মনে রাখতে হবে দুই দেশের কাছেই পরমাণু অস্ত্র আছে। আর পরমাণু যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না।’

ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইমরান খান বলেন, আমরা কাশ্মীরের এক ইঞ্চিও ছাড়তে রাজি নয়। আমরা কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ব। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, এই অঞ্চলটিতে যদি কোনো সময় পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে কেউই জয়লাভ করবে না। এই যুদ্ধের ফলে ভোগ করবে সারা বিশ্ব। তাই এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করবে।

আই.এ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন