
ফ্রান্সের বিয়ারিত্জ শহরে আজ সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফের সাক্ষাত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। জি-৭ বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের ফাঁকেই আজ বিকেলে তার সঙ্গে কথ হবে ট্রাম্পের। আর সেই কথাবার্তায় ঘুরে ফিরে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। মাস দুয়েক আগে ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে একবার ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মোদীর।
এবার দ্বিতীয়বার তিনি মুখোমুখী হতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের। কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরি জনগণের মর্যািদা কেড়ে নেওয়ার পর তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ট্রাম্পের। জি-৭ শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে রাষ্ট্রসংঘ মহাসচিব ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে মোদীর। তবে সেথানে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারটাই আলাদা। কারণ কাশ্মীরে নিয়ে কথা বলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
একবার তো ইমরান খানকে পাশে বসিয়ে আগ বাড়িয়ে বলেই ফেলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী নাকি তাঁকে কাশ্মীরি নিয়ে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করেছেন। এনিয়ে প্রতিবাদ করেছে ভারত। ট্রাম্প-মোদী বৈঠকের আগে মার্কিন প্রশাসনের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বিলোপ করা ভারতের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদী কী করতে চান তা হয়তো জানতে চাইতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এর আগে কাশ্মীর নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পর আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। ২১ আগস্ট মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডন জানায়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, আমরা কাশ্মীরের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব আইনি দিক খতিয়ে দেখে এবং সবকিছু বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
৩৭০ ধারা বাতিলের পর অধিকৃত কাশ্মীরে আজ ২২ দিনের কারফিউ অব্যাহত রয়েছে, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা এবং টিভি সম্প্রচার স্থগিত রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাটি পুরোদমে চলছে এবং মিডিয়াটির কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে এবং পেশা প্রশাসন টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস অনুসারে, যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থগিতকরণ, অবিরাম কারফিউ এবং মারাত্মক বিধিনিষেধের ফলে দুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং শিশুদের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
মুসলিমদের ঈদ উজ্জাপন এবং পবিত্র হজ থেকে তারা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন বিধিনিষেধ কার্যকর করার পাশাপাশি সেখানকার রাজনৈতিক নেতাদের আটক, গ্রেফতার অথবা গৃহবন্দি করা হয়েছে। গোলযোগের আশঙ্কায় রাজ্যের সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশ সেখানে কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আইনজীবী, অধ্যাপক, জম্মু-কাশ্মীর বার এসোসিয়েশন ও সিভিল সোসাইটির সদস্যরা রয়েছেন। রাজ্যটিতে গত ৫ অগস্ট থেকে যোগাযোগ মাধ্যমকে বন্ধ করে দেওয়া হলে মানুষজন ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। সরকারপক্ষ থেকে অবশ্য সেখানকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথা বলা হচ্ছে।
আইএ/পাবলিক ভয়েস

