অ্যামাজনের আরও সহস্রাধিক স্থানে আগুন

প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৯

১৫ আগস্ট থেকে জ্বলছে ‘দুনিয়ার ফুসফুস’ খ্যাত ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গল। এরমধ্যেই গত বৃহস্পতি থেকে শুক্রবারের মধ্যে নতুন করে অ্যামাজনের এক হাজার ২০০টি স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৪ হাজার দফায় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে এ বনভূমি। তবে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে এবারের আগুন সবচেয়ে ভয়াবহ। এ আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থী ও বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো-র নীতিকে দায়ী করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বন পুড়ে বাণিজ্য সম্প্রসারণের নীতির জন্য নিজ দেশের পরিবেশবাদীদের কাছেও তোপের মুখে পড়েছেন তিনি।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন করে সহস্রাধিক স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের শরণাপন্ন হয়েছে ছয়টি রাজ্য। বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ রকমের আগুনের কুণ্ডলী তৈরি হয়েছে। এসব রাজ্যের কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীর সহায়তা চাইছে। শনিবার পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সেলেস জানান, সেনা সহায়তা চাওয়া রাজ্যগুলো হচ্ছে পারা, রন্ডোনিয়া, রোরাইমা, টোকানটিন্স, একর এবং ম্যাটো গ্রোসো।

সর্বশেষ আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রাজিলিয়ান অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে অন্য দেশগুলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাপের মুখে শনিবার অ্যামাজনে সেনা মোতায়েন করে বলসোনারো সরকার। এরমধ্যেই সেখানে নতুন করে সহস্রাধিক স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার খবর এলো।

বিশ্বে গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ ব্রাজিল। মার্কিন কৃষি দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈশ্বিক রফতানির প্রায় ২০ শতাংশ আসে লাতিন আমেরিকার এই দেশটি থেকে। সামনের বছরগুলোতে এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি ব্রাজিলের অ্যামাজন বনাঞ্চলে যে আগুন জ্বলছে তার বেশিরভাগই লাগাচ্ছে কাঠুরে ও পশুপালকেরা। গবাদি পশুর চারণভূমি পরিষ্কার করতে এসব আগুন লাগানো হচ্ছে। আর এতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন দেশটির বাণিজ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো।

ব্রাজিলের গরুর মাংস উৎপাদনকারী কৃষকদের কাছে এটা স্বাভাবিক বাণিজ্য হলেও বাকি বিশ্ব এটাকে আতঙ্ক হিসেবে দেখছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামাজন বনাঞ্চলে আগুন লাগানোর ঘটনায় ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় দেশটি থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ। ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্রাজিলের গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার কথা দ্রুত ভাবার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ব্রাজিলের এই শিল্প সম্প্রসারণে গত জুনে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি বাতিল করার চিন্তার কথা জানিয়েছে আয়ারল্যান্ড।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যমতে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইএনপিই) জানিয়েছে, এবছর ব্রাজিলে আগুন লাগার ঘটনা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। গত বছর এ সময়ে আগুন লেগেছিল ৪০ হাজারবারের মতো। এবার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজারেরও বেশি, যার অর্ধেকই ঘটেছে অ্যামাজন অঞ্চলে। স্যাটেলাইটের পাঠানো ছবিতেও ধরা পড়েছে বনের বিশাল অংশ উধাও হওয়ার চিত্র।

ইউরোপিয়ান নেতাদের তীব্র চাপের মুখে অবশেষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত ম্যানগ্রোভ বন অ্যামাজনের দাবানল মোকাবিলায় ব্রাজিল সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) অ্যামাজনের প্রকৃতি সংরক্ষণ, আদিবাসী জমি এবং সীমান্ত অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনীকে মোতায়েনের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করেছেন তিনি।

আই.এ/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন