
মোদি সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে কারফিউয়ের ভেতরেই ফুঁসছে সেখানকার জনসাধারণ। ভারতের সরাসরি শাসন মানতে নারাজ ‘বিশেষ মর্যাদা’ হারানো এই উপত্যকা। তবে পরিস্থিতিকে আড়াল করতে প্রবলভাবে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে কাশ্মিরের প্রধান শহর শ্রীনগরভিত্তিক অধিকাংশ ইংরেজি ও উর্দু ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে না। এ ঘটনায় হতাশ সাংবাদিকরা পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দিয়েছেন।
মিডিয়ার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবা। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরভিত্তিক অধিকাংশ ইংরেজি ও উর্দু ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে না। প্রতিবেদক মাতিন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমি সেখানকার ঐতিহাসিক ক্লোক টাওয়ারের একটি ভিডিও ধারণ করতে বিখ্যাত লালচোক থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে সক্ষম হই। তবে কনসার্টিনা তার (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) দিয়ে নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আমাকে থামিয়ে দিয়েছিল সেনারা।
মাতিন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি কিছু ছবি ও ভিডিও নিতে চেষ্টা করেছিলাম। তবে দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী আমাকে থামিয়ে দিয়েছিলো। তারা আমাকে আমার ক্যামেরা বন্ধ করতে অনুরোধ করেছিলো।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আমি রিপোর্টার, জবাবে তারা বলেছিলো, সবকিছু এখন শেষ, ফিরে যান।’ ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার লেখক ও কনসাল্টিং এডিটর সাগরিকা ঘোষ বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত করা ছাড়াও সমগ্র রাজ্য বন্ধ করে কাশ্মিরের জনগণকে অপমান করেছে সরকার।’
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের খবর ছড়িয়ে পড়ার সময় পুত্রবধূকে একটি মাতৃ সদনে নিয়ে যাচ্ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী নবী খান। বিশেষ মর্যাদা বাতিল প্রসঙ্গে আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় উদ্বেগের কারণ হলো এখন রাজ্য বহির্ভূত বিষযগুলো আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করবে এবং আমাদেরকে শিগগিরই সংখ্যালঘুতে পরিণত করবে।’ শ্রীনগরের পার্শ্ববর্তী এলাকা আবি গুজারের বাসিন্দা সাফিয়া নবী।
৬৬ বছর বয়সী এ নারী আল জাজিরাকে বলেন, ছেলের মুখ থেকে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের কথা জানার পর থেকে তিনি অস্থির হয়ে আছেন। সাফিয়া বলেন, ‘পরিবারের জন্য রান্না করতে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করতে আমি আমার চেহারা স্বাভাবিক রেখেছি। কিন্তু আমার হৃদয়ে কান্নার রোল বয়ে যাচ্ছে। আমরা রাস্তায় লড়াই করব, তারপরও আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী ভারতের শাসন মানব না।’
আই.এ/পাবলিক ভয়েস

