

ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ভারতের ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি বিভিন্ন স্থানে বিকৃত আনন্দ উদযাপন সভা করেছে। এমন এক উদযাপন সভায় ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিলে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের যথার্থতা তুলে ধরতে গিয়ে বিজেপি’র উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত বিজেপি আইন প্রণেতা বিক্রম সাইনি বলেছেন, ‘এখন দলের নেতাকর্মীসহ যে কেউ কাশ্মিরের ফর্সা নারীদের বিয়ে করতে পারবে, সবার উচিত হবে কাশ্মীরের ফর্সা নারীদের বিয়ে করা’ ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, তার এই বক্তব্য ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার মোজাফফরনগরে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে বিক্রম সাইনি বলেন, সরকারের কাশ্মীরের সিদ্ধান্তের কারণে এখন বিজেপি কর্মীরা সেখানে যেতে পারবে, জমি কিনতে পারবে আর বিয়েও করতে পারবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে হিন্দিতে এই আইন প্রণেতা বলেন, ‘কর্মীরা খুবই উৎসাহিত আর যারা এখনও বিয়ে করেনি তারা এখন সেখানে গিয়ে বিয়ে করতে পারে। এখন কোনও সমস্যা নেই। এর আগে সেখানে নারীদের ওপর বহু সহিংসতা হয়েছে। যদি কোনও কাশ্মিরের নারী উত্তর প্রদেশের কোনও পুরুষকে বিয়ে করতো তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যেতো। ভারত আর কাশ্মিরের আলাদা নাগরিকত্ব ছিল।’
পরে এই ধরণের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনও ধরণের অনুতাপই দেখাননি ওই আইন প্রণেতা। তিনি দাবি করেন, যা বলেছেন তাতে আপত্তিকর কিছুই নেই। বার্তা সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে বিক্রম সাইনি বলেছেন, ‘কোনও সমস্যা ছাড়াই এখন যে কেউই কাশ্মিরের নারীদের বিয়ে করতে পারে। সেটাই আমি বলেছি আর এটাই ঠিক। এটা কাশ্মিরি জনগণের স্বাধীনতা। সে কারণেই আমরা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলাম। এখন কাশ্মীরিরা স্বাধীনতা পেয়েছে।’
বিতর্কিত মন্তব্য এর আগেও করেছেন বিক্রম সাইনি। এ বছরের শুরুতে খাটাউলি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত এই আইন প্রণেতা ভারতে অনিরাপদ বোধ করা ব্যক্তিদের বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। জানুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, যারা এই দেশে অনিরাপদ বোধ করে তারা জাতীয়তাবিরোধী এবং তারা এই দেশে বাস করার অধিকার রাখে না। আমাকে একটি মন্ত্রণালয় দেওয়া হোক আর আমি তাদের সঙ্গে বোমা বেঁধে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেই।
প্রসঙ্গত : ভারতে অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর রাজ্যকে আলাদা মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে ভারতের সাংবিধানে যে ৩৭০ ধারা এবং ৩৫-এ আর্টিকেল রয়েছে অন্যায় ভাবে ভারতের বিজেপিশাসিত সরকার তা রদ করে দিয়েছে। যার মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীর তার আলাদা রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে সাথে সাথে জম্মু কাশ্মীরকে ভাগ করে লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা রাজ্য এবং জম্মু কাশ্মীরকে আলাদা রাজ্য করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপির প্রধান এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর নেতৃত্বে গতকাল সোমবার (৫ আগষ্ট) রাজ্যসভায় এই ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। বিরোধি দদলগুলোর চরম বিরোধিতা উপেক্ষা করেও রাজ্যসভায় এ বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। রাজ্যসভায় এ বিল পাশ হওয়ার পর সমগ্র ভারতে কঠোর প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছে কংগ্রেস, সিপিএমসহ অনেক সংগঠন। কিন্তু সেসব প্রতিবাদ উপেক্ষা করে আজ মঙ্গলবার রাজ্যসভার পর লোকসভাতেও পাশ হয়ে গেল ‘কাশ্মীরিদের অধিকার খর্ব করার বিল’ বা ‘আর্টিকল ৩৭০’ বিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৩৬৬ ভোটে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষা।
এর আগে রাজ্যসভায় তথাকথিত এই ‘কাশ্মীর রি-অর্গানাইজেশন বিল’ পাশ হয় দুই তৃতীয়াংশ ভোটে। তবে এ বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন তারা কাশ্মীরিদের সকল ধরণের সহায়তা দেবে। ইমরান খানকে সকল ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এমনকি বিশ্ব পরাশক্তি চিনও এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।