

অন্যায়ভাবে ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরিদের ওপর যে নিপিড়নের খড়গ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে তার প্রতিবাদ করে ঢাকায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে ভারতীয় মিডিয়া আখ্যায়িত করেছে “ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যূতে ইসলামী আন্দোলনের নাক গলানো” বলে। তবে ভারতীয় মিডিয়ার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম।
আজ মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বৃহৎ বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ মিছিলকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় নিউজ মাধ্যম ‘কলকাতা টোয়েন্টিফোর এক্স সেভেন’ আখ্যায়িত করেছে ‘ভারতের অভ্যান্তরীণ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাক গলানো’ বলে। এমনকি ভারতীয় এই মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে আমেরিকায় মিথ্যাচার করা প্রিয়া সাহার বিপক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অবস্থানকেও নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করেছে।
তবে তাদের এ দাবি সর্বোতভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম পাবলিক ভয়েসকে বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যূতে ভারতের সাংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করার মতো অসাংবিধানিক কাজ করা কোনোভাবেই কেবল ভারতের নিজেদের বিষয় নয়। বরং কাশ্মীর ইস্যূ পুরো উপমহাদেশের বিষয়। কাশ্মীরিদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব কেবল ভারতীয়দের নয় বরং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেরও এ বিষয়ে অবস্থান থাকা জরুরী।
মুফতী ফয়জুল করীম এ বিষয়ে আরও বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘের আওতাভূক্ত একটি বিষয়। কোনোরুপ আলোচনা না করে কেবল নিজেদের স্বার্থে বিজেপি সরকার কাশ্মীরে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর যে হস্তক্ষেপ করেছে তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদের নেশায় সিকিম রাজ্য তার সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে এখন সার্বভৌমত্ব হারালো কাশ্মীর। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশও তার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হারাতে পারে ভারতের কাছে। তাই ভারতের যে কোনো অন্যায় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ কথা বলবেই।
মুফতী ফয়জুল করীম কাশ্মীর ইস্যূতে বিজেপির অন্যায্য অবস্থান নিয়ে ভারতের সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদের বিষয়টি তুলে এনে বলেন, বিজেপির এই অন্যায্য দাবি ভারতেই কেউ সমর্থন করেনি তারপরও রাজ্যসভায় তারা অন্যায়ভাবে এ আইন পাশ করিয়ে নিয়েছে। যা কাশ্মীরিদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে স্পষ্ট প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তাই কাশ্মীর ইস্যূতে কেবল বাংলাদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন সংগঠনই নয় বরং বিশ্বের সকল মুসলমান এবং মানবতার দাবিদার সকলে কথা বলা উচিত। তাতে তা কোনোভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যূতে নাক গলানো হবে না।
প্রসঙ্গত : ভারতের অধিকৃত থাকা জম্মু কাশ্মীর রাজ্যকে আলাদা মর্যাদা দিয়ে ভারতের সাংবিধানে যে ৩৭০ ধারা এবং ৩৫-এ আর্টিকেল রয়েছে অন্যায় ভাবে ভারতের বিজেপিশাসিত সরকার তা রদ করে দিয়েছে। যার মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীর তার আলাদা রাজ্যের মর্যাদা হারিয়েছে সাথে সাথে জম্মু কাশ্মীরকে ভাগ করে লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা রাজ্য এবং শ্রীনগর কাশ্মীরকে আলাদা রাজ্য করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিজেপির প্রধান এবং ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর নেতৃত্বে গতকাল সোমবার (৫ আগষ্ট) রাজ্যসভায় এই ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়। বিরোধি দদলগুলোর চরম বিরোধিতা উপেক্ষা করেও রাজ্যসভায় এ বিলটি পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। রাজ্যসভায় এ বিল পাশ হওয়ার পর সমগ্র ভারতে কঠোর প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছে কংগ্রেস, সিপিএমসহ অনেক সংগঠন। কিন্তু সেসব প্রতিবাদ উপেক্ষা করে আজ মঙ্গলবার রাজ্যসভার পর লোকসভাতেও পাশ হয়ে গেল ‘কাশ্মীরিদের অধিকার খর্ব করার বিল’ বা ‘আর্টিকল ৩৭০’ বিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৩৬৬ ভোটে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষা।
এর আগে রাজ্যসভায় তথাকথিত এই ‘কাশ্মীর রি-অর্গানাইজেশন বিল’ পাশ হয় দুই তৃতীয়াংশ ভোটে। তবে এ বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন তারা কাশ্মীরিদের সকল ধরণের সহায়তা দেবে। ইমরান খানকে সকল ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস