ধর্ষকের লাশ দাফন করতে দেয়নি তুরস্কের জনগণ!

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০১৯
আসলানের কফিন নারীদের কাঁধে

ডেস্ক রিপোর্ট : তুরস্কের একটা ঘটনা বলি আজ। ২০১৫ সালের কথা, ওজগেকান আসলান নামের উনিশ বছর বয়েসী এই তরুণী ছিল সাইকোলজির ছাত্রী। মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে ভীষণ ভালো লাগতো তার। নিম্ন মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে তার বেড়ে ওঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপটা না পেলে হয়তো পড়ালেখাও চালিয়ে যেতে পারতো না সে।

তার পড়ালেখার খরচ জোগানোর জন্যে তার মা একটা হোটেলে বাড়তি কাজ করা শুরু করেছিলেন। চাকুরী করে বাবা-মায়ের রক্ত পানি করা পরিশ্রমটাকে সার্থক করবে, এমনটাই হয়তো ভাবনা ছিল আসলানের। কিন্ত মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। মানুষের মনের হিজিবিজি রেখা নিয়ে ভাবতে থাকা সেই মেয়েটা হয়তো জানতো না, বিকৃতমনস্ক কয়েকজন পুরুষের লালসার শিকার হয়ে মাত্র উনিশ বছর বয়সেই তাকে পাড়ি জমাতে হবে না ফেরার দেশে!

২০১৫ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী ক্লাস শেষে এক বান্ধবীর সঙ্গে শপিংমলে গিয়েছিল আসলান। সেখান থেকে খেয়েদেয়ে বেরুতে বেরুতে রাত হয়ে এসেছিল প্রায়। বাড়ি ফেরার জন্যে মিনিবাসে উঠেছিল দুই বান্ধবী। আসলানের সেই বান্ধবী তার বাড়ির সামনে নেমে গিয়েছিল, আসলানের গন্তব্য আরো খানিকটা দূরে। গাড়িতে তখন সে একাই যাত্রী ছিল। কিন্ত সেই রাতে আসলান আর ঘরে ফেরেনি।

পরদিন আসলানের পরিবারের সদস্যেরা থানায় রিপোর্ট করে। যোগাযোগ করা হয় আসলানের সেই বান্ধবীর সঙ্গে। তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ খুঁজতে থাকে সেই মিনিবাস আর তার চালককে। নম্বর মিলিয়ে পুলিশ এবার খুঁজে বের করলো সেই মিনিবাসটাকে। আসলানের বান্ধবী সনাক্ত করলো মিনিবাসের চালক সুফীকে। পুলিশ কাস্টোডিতে নেয়া হলো তাকে। কিছুক্ষণ ভুলভাল তথ্য দেয়ার পরে হঠাৎ করেই লোকটা স্বীকার করলো, আসলানকে ধর্ষণে এবং হত্যার কথা। তার দেয়া তথ্য মতো আসলানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ইতিমধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নারীদের তীব্র আন্দোলন। প্রতিক্রিয়াশীল এই দেশটিতে নারীরা যে খুব সম্মানজনক অবস্থানে আছেন, এমনতা নয়। সেখানেও নারী নিগ্রহ বা নারী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটে। কিন্ত আসলানের ঘটনাটা সবার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল প্রবলবভাবে। মেডিকেলের মর্গ থেকে আসলানের লাশ মিছিল করে নিয়ে এসেছিল নারীরাই, শেষবারের মতো তাকে গোসল করিয়ে জানাজা পড়িয়েছিল নারীরা। আসলানের কফিন কাঁধে করে তাকে কবরস্থানে যারা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের প্রায় সবাই নারী। সেই নারীরাই দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন, কোন পুরুষকে আসলানের মৃতদেহটা ছুঁতেও দেননি!

তুরস্কে আদালতে মৃত্যুদণ্ডের প্রথা নেই, সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্ত সবাই দাবিকরে ছিলো তার মৃত্যুদণ্ডে। রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন নারীরা, সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ দিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন মানুষ। শেষমেশ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাই পেয়েছিল তিন অপরাধী।

২০১৬ সালের ১১ই এপ্রিলে গুলতেকিন আলান নামের পঞ্চাশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদি বন্দুক নিয়ে গুলি করেন সুফী আর তার বাবাকে। দুজনকেই হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখানে মৃত্যু হয় সুফীর। তার বাবা সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান। নিহত সুফীর লাশটা পাঁচদিন ধরে পড়েছিল হাসপাতালের মর্গে, দাফন করা যাচ্ছিল না, কারণ মারসিন প্রদেশ, যেখানে সুফী আর আসলান দুজনের বাড়ি, সেখানকার লোকজন কোনভাবেই এই খুনীর লাশ এই এলাকায় দাফন করতে দিতে রাজী ছিল না। সুফীর মায়ের শত অনুরোধের পরেও মন গলেনি কারো, মৃত্যুর পাঁচদিন পরে এক মধ্যরাতে পুলিশি প্রহরায় অন্য এক এলাকায় নিয়ে একটা অজ্ঞাত স্থানে দাফন করা হয় সুফীর লাশ।এস এম সবুজ

মন্তব্য করুন