
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদ। হযরত ইবরাহীম আ. এর স্মৃতি স্বরুপ সারাবিশ্বের মুসলমানরা মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র জন্তু কুরবানির মাধ্যমে এ ঈদ পালন করে থাকে। বাংলাদেশে আগামী ১২ আগস্ট সোমবার ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
গতকাল শুক্রবার ২ আগস্ট বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সেই হিসেবে আজ শনিবার (৩ আগস্ট) জিলহজ্বের ১ তারিখ এবং আগামী ১২ আগস্ট ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন হবে সারাদেশে। অবশ্য এটা এক প্রকার নিশ্চিত হওয়া গেছে আরো একদিন আগে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচে জিলহজ্বের চাঁদ দেখার পর পরই।

দনিয়া কলেজের সামনের রাস্তায় তৈরি হচ্ছে গরু বাঁধার আড়াইল। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কুরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে সারাদেশে অস্থায়ী পশুর হাট বসে। সারাদেশের জেলা-উপজেলা, পৌর শহর ও আঞ্চলিক ছোট-বড় বাজারে স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাট বসে। শুধুমাত্র রাজধানীতে ঈদ উপলক্ষ্যে কয়েক শত অস্থায়ী হাট বসে।
আজ শনিবার সন্ধায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা হয় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া সড়কে বসা অস্থায়ী পশুর হাট। রাস্তার দুই পাড়ে (উত্তর-দক্ষিণ) বসেছে এই হাট। মহাসড়কের ঢালুতে দনিয়া কলেজের সামনের সড়কে এবং বিপরীত পাশে বসা এই হাট ইতোমধ্যে জমতে শুরু করেছে। জিলহজ্বের আজ প্রথম দিনেই গরু নিয়ে বিক্রেতাদের আগমন ছিলো লক্ষনীয়। হাট এখনো পুরোপুরি প্রস্তত না হলেও প্রচুর দেশি গরু এসে গেছে ইতোমেধ্য।

গরু থাকলেও নেই ক্রেতা বা বিক্রেতার কেউ। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও কোথাও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী আড়াইল তৈরি করা হচ্ছে বিক্রেতাদের নিয়ে আসা গরু বা অন্যান্য পশু বেঁধে রাখার জন্য। যেখানে যেখানে প্রস্তুত হয়েছে সেখানে ইতোমেধ্যে সারিবদ্ধভাবে গরু বেঁধে রেখেছেন বিক্রেতারা। কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ বসে আছেন, কেউবা নিজের আদরের প্রাণিটিকে খাবার দিচ্ছেন। এসময় কথা হয় বেশ কয়েকজন বিক্রেতার সাথে।
মাদরীপুর শিবচর থেকে ২১ টি গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহমান। সঙ্গে আরো লোকজন আছেন। তিনি জানালেন, প্রতিবছরই এখানে গরু নিয়ে আসেন তিনি। গত বছর ১১টি গরু নিয়ে এসেছিলেন এবং সবগুলো বিক্রি করতে পেরেছিলেন। প্রথম দিনেই নিজেদের পালের এবং এলাকা থেকে কেনা সহ ২১টি গরু নিয়ে এসছেন। আশা করছেন এবার গত বছরের তুলনায় ভালো দাম পাবেন। বন্যার কারণে দাম পড়তি হওয়ার আশঙ্কাও নেই জানালেন তিনি।

কথা বলছেন শিবচরের বিক্রেতা আব্দুর রহমান। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
প্রতিবারের ন্যায় ফরিদপুর থেকে জাহাঙ্গীর এসেছেন ১৮টি গরু নিয়ে। ভাগিদার আছেন আরো কয়েকজন। একটি গরুর দাম জানালেন ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকার চাহিদার কথা। রাস্তায় কোনো প্রকার উটকো ঝামেলা বা চাঁদাবজির কবলে পড়েননি জানিয়ে রাস্তাঘাটে আরো উন্নত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যাতে সহজে সুন্দরভাবে যাতায়াত করতে পারেন। ইন্ডিয়ান গরু আসার ব্যাপারে তিনি জানালেন এতে কোনো শঙ্কা নেই। তার কথা হলো, যারা দেশি গরু কিনবেন তারা দেশিটাই কিনবেন। আর যারা বিদেশিটা নিবেন তারা বিদেশিটা কিনবেন। এছাড়াও বিদেশি গরু আসলে নিজেদের বিক্রিতে সামান্য ক্ষতি হলেও সার্বিকভাবে দেশের মানুষের ভালো হবে বলেই তিনি মনে করেন।

কথা বলছেন, ফরিদপুরের বিক্রেতা জাহাঙ্গীর। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
শিবচর থেকে এসেছেন মিঠু। তিনি এনেছেন নিজেদের পালের দুটি গরু। দুটি গরুর দামি হাঁকিয়েছেন আড়াই লক্ষ টাকা করে। দেশিয় জাতের এই গরুকে তারা খাবার হিসেবে কুড়া এবং বুশি খাইয়েছেন। এখানেও তাই খাওয়াচ্ছেন। গরুর বিক্রির আগ পর্যন্ত এই খোলা পরিবেশেই দিন রাত পার করবেন বলেও জানান।

কথা বলছেন মাদারিপুরের মিঠু। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে প্রথম দিনে পুরো বাজারের বড় গরুটির সাক্ষাত পেলেও পাওয়া যায়নি তার মালিক কিংবা কিংবা সংশ্লিষ্ট কারোর। জানা যায়নি তার কোনো নাম আছে কিনা কিংবা তার মূল্য কত। প্রথম দিন হওয়ায় গুছিয়ে ওঠা যায়নি বাজারের বিভিন্ন দিক। পাওয়া যায়নি ইজারদার বা সংশ্লিষ্ট কাউকে।

বাজারের সব থেকে বড় গরুটিকে নিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ছবি: মুহসিন, পাবলিক ভয়েস।
তবে কথা হয়েছে স্থানীয়, দর্শনার্থী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে। অস্থায়ী হাটের কারণে সৃষ্ট যানজট, কুরবানির পশু কেনার অনুভুতি কিংবা কে কোথায় কুরবানি করবেন সেসব বিষয় সহ তাদের সাথে আলাপ হয়েছে নানান বিষয়ে। সেসব থাকবে দ্বিতীয় পর্বে। সেই সাথে থাকবে পূর্নাঙ্গ ভিডিও প্রতিবেদন। চোখ রাখুন পাবলিক ভয়েস টোয়িন্টিফোর ডটকম-এ। এবং পাবলিক ভয়েসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। ক্লিক করুন….
/এসএস

