

প্রতিবেদনটা যখন লিখছি তখন আমি নিজেই এই পানি সঙ্কটের ভূক্তভোগী হয়ে আছি। গোছল করতে বাথরুমে ঢুকে পানির ট্যাপ ছেড়ে দেখি পানি নেই। অসহায়ের মতো বের হয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে এই প্রতিবেদন লিখতে বসেছি। যাত্রাবাড়ীতে পানি সঙ্কট এই সমস্যা এখন আর সামান্য সঙ্কট নেই বরং মহা সঙ্কটে রূপ নিয়েছে। প্রায় ১০ দিন ধরে ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না এই এলাকায় বসবাস করা লাখো বাসিন্দা। ওদিকে শান্তির ঘুমে কাঁতর ওয়াসার দায়িত্বশীলদের এসব নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই। মানুষ পানির অভাবে এক ধরণের মানবেতর জীবন যাপন করছে এদিকে কোনো খেয়ালই নেই তাদের।
যাত্রাবাড়ী থেকে নিয়ে শনির আখড়া, নয়াপাড়া, দনিয়া এসব এলাকায় পানি যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। আশেপাশের বাসা, বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ মাদরাসা সব জায়গাতেই এক ভয়ানক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাসা, বাড়িতে মানুষজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারছে না পানির অভাবে। সারাদিনে সব মিলিয়ে আধাঘন্টা সময়ও থাকছে না পানির সার্ভিস। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পতিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শত শত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বিপাকেই পড়েছে। এমনকি মসজিদেগুলো থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে নামাজের জন্য অজু বাসা থেকে করে আসতে। এ যেন এক দুর্ভিক্ষের সময় চলছে। যেসব বাসা, বাড়িতে রিজার্ভ পানির ট্যাংকি আছে তারা কিছু পানি রিজার্ভ করে রাখতে পারলেও যারা সরাসরি ওয়াসার লাইন থেকে পানি ব্যবহার করে তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। কখন পানি এলো কখন গেলো তা বুঝতে বুঝতেই পানির সার্ভিস শেষ।
সঙ্কট কতোটা তীব্র আকার ধারণ করেছে তা এক নজরে বুঝা যায় প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটির দিকে তাকালে। ওয়াসার মূল্যবান পানির অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছে এক লোক। তাও বোতলের কাটা মুখ দিয়ে পাইপ আটকে তা দিয়ে পানি নিচ্ছে সে। হয়ত এইটুকু পানিই তার সংগ্রহে আছে। কেবল এই একজনই নয় পুরো এলাকায় এভাবে দেখা মিলেছে অনেকের যারা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছে তাদের কাজ ব্যবহার করার জন্য। অনেককে দেখা গেছে বৃষ্টিতে গোছল এমনকি কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজ করতে।
পানির এই সমস্যা নিয়ে স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ ঝেড়ে বলেছেন, ওয়াসা মাস শেষে ঠিকই বিলের কাগজ পাঠিয়ে দেয় কিন্তু পানির সার্ভিস তারা মোটেও ঠিকমতো দেয় না। এভাবে অনিয়ম করে কেউ চলতে পারে না।
এ ব্যাপারে ওয়াসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দিচ্ছেন মনগড়া তথ্য। তাদের দৃষ্টিতে এসব লাইনে পানির কোনো সংকটই নেই। নিয়মিত তারা পানি দিয়ে যাচ্ছে বলেই দাবি তাদের। কিন্তু এই তাদের এই মিষ্টি কথায় তো আর জীবনযাত্রা চলে না। তাই সংশ্লিষ্ট মহলের অতি-শীগ্রই এদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগের চিত্র আর কতো দেখতে হবে সে প্রশ্নই থেকেই যাবে নয়তো…।